আজকাল বাচ্চাদের জীবন অনেকটা রেস এর ঘোড়ার মত।
সব বাবা মা চায় তার বাচ্চা ফার্স্ট হোক। ক্লাসে যদি ৩০ জন বাচ্চা থাকে সবাই তো ফার্স্ট হতে পারবে না। তাই বাবা মা তাদের উপর এমন চাপ প্রয়োগ করেন, বাচ্চারা সামলে উঠতে পারে না। যেন রেসের প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি।
ভাল স্কুলে বাচ্চাকে পড়াতেই হবে। লাখ লাখ টাকা ডোনেশন, আলাদা প্রাইভেট পড়ানো,গান, নাচ, আবৃত্তি সব কিছু মিলিয়ে বাচ্চা আর বাচ্চা থাকে না, হয়ে ওঠে যোদ্ধা। প্রতিদিন সকালবেলা যেন যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি।
বাংলাদেশে গড়ে শহরের স্কুলের প্রতিটা বাচ্চার ব্যাগের ওজন সাড়ে সাত কেজি। স্কুলের বই খাতা, প্রাইভেটের আলাদা বই খাতা, টিফিন, পানির বোতল, নাচের ড্রেস ইত্যাদি ভরা থাকে ওই ব্যাগে।
প্রতিদিন বাচ্চারা কুঁজো হয়ে এই ভারি ব্যাগ বহন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অতিরিক্ত ভার বহন করতে গিয়ে বাচ্চারা মেরুদণ্ডের সমস্যা ছাড়াও হীনমন্যতা, অরুচি, শারীরিক দুর্বলতা সহ নানা রোগের সম্মুখীন হচ্ছে।
না আছে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, সারাদিন কাটে স্কোয়ারফিট বিল্ডিং এর ভিতরে বন্দী পাখির মত। অবসর সময় কাটে টিভিতে কার্টুন দেখে, নয়ত ট্যাবে গেমস খেলে। বন্ধুদের সাথে খেলার সময় কই।
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে আনন্দে। মাছ ধরা, পুকুরে সাতার কাটা, গাছে চড়া, চড়ুইভাতি, স্কুলে থেকে ফেরার পর মাঠে খেলতে যাওয়া, নারিকেলের পাতা দিয়ে বাঁশি বানানো। সন্ধ্যায় বাসায় এসে পড়তে বসা। কি দিনগুলো ছিল, এখনও মনে করতে ভাল লাগে।
কেন এই প্রতিযোগিতা? কার প্রতিযোগিতা? বাচ্চার না বাবা মায়ের? পাশের বাসার ভাবির ছেলে ফার্স্ট হয়েছে বলে আমার বাচ্চারও হতে হবে, এমন একটা মনোভাব। নিজেদের অপ্রাপ্তিগুলোকে বাচ্চাদের মাধ্যমেই পাওয়ার চেষ্টা করে কি লাভ?
বাচ্চা পেটে থাকতেই ঠিক করে ফেলি বাচ্চাকে ডাক্তার বানাব, নাকি ইঞ্জিনিয়ার। বাচ্চা যদি লেখক হতে চায়? কবি হতে চায়? অথবা চিত্রকর?
সেই স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করে বাবা মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে যুদ্ধ চলতেই থাকে। ভাল স্কুল, ভাল কলেজ, ভাল ইউনিভার্সিটি, ভাল চাকরি। ব্যাস! তারপর?