Atheist Chapter
মডারেট মুছলিমের মজ্জাগত খাসলত

মডারেট মুছলিমের মজ্জাগত খাসলত

লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে যেতাম। অন্যসব পাড়াগাঁয়ের মতো আমাদের গ্রামেও মাঝেমাঝে বন্ধুদের মধ্যে মাঠে ঝগড়া লেগে যেতো। তখন বাড়িতে নালিশ আসতো। আর নালিশ আসলেই আমার মা পিঠের ওপর ধপাস ধপাস কয়েকটা বসিয়ে দিতেন। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ কখনোই দিতেন না। মায়ের যুক্তি ছিলো: “অন্যের ছেলের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তোর নিশ্চয় দোষ আছে। নয়তো তোর সাথে কেন মারামারি লাগবে? আগে তুই কী দোষ করেছিস, সেটা বল।”
গ্রামের অন্যসব মহিলার মতো আমার মা কোনোদিনই অন্যের ছেলেকে দোষারোপ করে প্রতিবেশীদের সাথে ঝগড়া করতে যাননি। নিজের ছেলেকে শাসন করাকেই উনি সর্বোত্তম মনে করতেন। এটাকেই বলে আত্মসমালোচনা। ছোটবেলায় কম বুঝতাম, তাই মায়ের ওপর রাগ লাগতো। এখন আর লাগে না, বরং মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। একটা অসাধারণ শিক্ষা আমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। কোনো কিছু হলে অন্যের ভুল না খুঁজে আগে নিজের সমালোচনা করা।

পৃথিবীর এখানে-সেখানে ইসলামী সংগঠনগুলো আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাচ্ছে। মানুষ খুন করছে। আল্লাহু আকবর বলে তারা মানুষ জবাই করছে। তারা খারাপ মুসলমান! মেনে নিলাম। তো ভালো মুসলমানদের (!) দায়িত্ব কী? তাঁদের করণীয় কী এখন? তাঁদের কাজ হচ্ছে আমেরিকা, ইসরায়েলের ষড়যন্ত্র খুঁজে বের করে ফেলা। সব ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র। মুসলমানদের কোনো দোষ নেই। ব্যস, তারপর ঘুমোতে যাও। আত্মসমালোচনা কোনদিন করবে না। কোনোদিন এই প্রশ্নগুলো নিজেদেরকে করবে না?
  • কেন শুধু মুসলমানেরাই জঙ্গি হচ্ছে?
  • অন্য অনেক ধর্মের লোক আছে। তাঁদের মধ্যে থেকে কেন জঙ্গি হচ্ছে না?
  • সব জিহাদি জোশ কেন শুধু মুসলমানদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আসে?
  • ছেলেরা তো বোমা মারছে বুঝলাম। বিভিন্ন মুসলিম দেশে থেকে মেয়েরা পালিয়ে কোন লোভে কিসের মোহে পড়ে আইএস জঙ্গিদের দেহ দান করতে যাচ্ছে? (এটার আবার নাম দিয়েছে যৌনজিহাদ! ছিঃ!)
  • তেলসমৃদ্ধ দেশ শুধু আরব দেশগুলো নয়। চীন, কানাডা, ভেনিজুয়েলা, মেক্সিকো এই দেশগুলোতে কেন আমেরিকা ষড়যন্ত্র করে জঙ্গি তৈরি করতে পারছে না?
এইসব প্রশ্ন কোনোদিন তারা নিজেদের বিবেককে করবে না। সব দোষ আমেরিকার! ব্যস, দায়িত্ব শেষ। এটা করে এই মডারেট মুসলমানদের কী লাভ হয়? মুসলমানদেরই বা কী লাভ হয়?… কোনো লাভ হয় না। মুসলমানেরা বাইরের দেশে কয়জন মানুষ মারছে? সারা বছর নিজেরাই মারছে নিজেদেরকে। নিজেরাই মরছে। আজ ইরাক তো কাল নাইজেরিয়া, কাল কেনিয়া তো পরশু সিরিয়া। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সুন্নীরা শিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করছে, তাদের মসজিদে জুমার নামাজে বোমা মারছে। শিয়ারা সুন্নীদের বোমা মারছে। ঈদের জামাতও বাদ যাচ্ছে না।
এর মধ্যে মডারেট মুসলমানেরা কী করে? যখন অন্য দেশে হয়, তখন ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র খোঁজে। আমেরিকা-ইউরোপকে গালাগালি করে। তারপর যখন নিজের দেশে হয়, তখন ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে ভিখারিদের মতো ইউরোপ-আমেরিকাতেই পালিয়ে যায়। আশ্রয় ভিক্ষা করে। এই চক্রই চলে আর এই চক্রই চলতে থাকবে। যতদিন মুসলমানেরা আত্মসমালোচনা করছে না, ততদিন এই বৃত্তের ভেতরেই ঘুরপাক খাবে তারা।
একটা সহজ উদাহরণ দিই: শিক্ষিত পুলিশ অফিসারের আর ধনী ঘরের মেয়ে কেন নেশাগ্রস্ত হয়? কেন নিজের মা-বাবাকে খুন করে? আবার গরীব ঘরের ছেলেটি কেন দিনে রিকশা চালিয়ে রাতে পড়াশোনা করে এ প্লাস পেয়ে অদম্য মেধাবীদের তালিকায় নাম উঠিয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করে?… আসলে সবই শিক্ষা প্রাপ্তি কিংবা শিক্ষার অভাব। আত্মসমালোচনা করুন সময় থাকতে। নয়তো কিছুদিন পর নিজেরাও সিরিয়ানদের মতো শরণার্থীই হবেন। আর আশ্রয় কোথায় পাবেন, জানেন তো?… সারাজীবন যাঁদের গালাগালি করেন, সেই ইউরোপ-আমেরিকাতেই।

আরিফুর রহমান

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular