Atheist Chapter

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা

ধরেন ক্লাশ ওয়ানের বইতে এই বাক্যগুলো লেখা হলো- আমার নাম আবু, আমার বোনের নাম আমিনা। আব্বা-আম্মার সাথে আমরা নানাবাড়ি যাই।… ক্লাশ ওয়ানের এই টেক্সগুলো পড়ে অমিত কিংবা অনিতা নামের কোন শিশুর যদি মনে হয় বইগুলোতে আসলে তাদের কথা নেই- তাহলে কি ভুল বলা হবে? অমিত তার বোনকে দিদি বলে ডাকে। তার নামও আমিনা নয়। অনিতাও তার ভাইকে দাদা বলে ডাকে। আবু নামটাও তাদের পরিবারে রাখা হয় না। ‘নানাবাড়ি’ জিনিসটাও তারা বলে না। স্বাভাবিকভাবেই একটু বড় ক্লাশে উঠার পর তারা বুঝতে পারে মুসলিম পরিচয়গুলোই তাদের পাঠ্যবইতে তুলে ধরা হয়। খুব ছোট থেকেই তারা বুঝতে পারে- এই দেশ তাদের কোন কিছুই প্রতিনিধিত্ব করে না…। কোন শিশুর বা কোন কমিউনিটির মনে যেন এই হীনমন্যতার সৃষ্টি না হয় তার জন্যই সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা পৃথিবীর সভ্য জাতিরা গড়ে তুলেছে।

মনে করুন আপনি বাচ্চাদের জন্য একটা কমিকস বই করবেন। লিখতে বসে চরিত্রগুলোর নাম দিতে বসে দেখলেন তাদের নাম হাসান, শাহরিয়ার, জুবাইয়ের… ইত্যাদি বসাচ্ছেন। জাপানি কোন কমিকস বইয়ের চরিত্রগুলোর নাম হয় সিজুকা, ক্যানিজি, জিয়ান…। জাপানি শিশুদের পারিবারিক ধর্ম খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ যাই-ই থাক- তাদের সবার নামগুলো এমনিই হয়। এমনকি যে অমিত কিংবা অনিতার উদাহরণ দিলাম তাদেরকে বড় দাগে হিন্দু ঠাউরালেও বাঙালী খ্রিস্টান বৌদ্ধদের নাম অমিত বড়ুয়া কিংবা অনিতা গোমেজ বিচিত্র নয়। বাঙালী খ্রিস্টান, বৌদ্ধরাও বাপের বোনকে পিসি ডাকে। মার বোনকে মাসি ডাকে। যথাক্রমে বাপের বাবা-মাকে ঠাকুরদা আর ঠাকুর মা ।

আমি যদি শিশুদের জন্য একটা কমিকস কিংবা তাদের পাঠ্যবই লেখার সময় সিদ্ধান্ত নেই যে কিছুতে শিশুদের ধর্মীয় পরিচয়ে বিভেদ করব না তাহলে চরিত্রদের নাম অমিত-অনিতা এবং তাদের আত্মীয়দের পিসি-মাসি-ঠাকুরমা-ঠাকুরদা বলে সম্বধন করি তাহলে দেখাচ্ছে চরিত্রগুলো পাঠ করে বাঙালী হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ কমিউনিটির কোন শিশুর একবারও মনে হবে না সে অন্য কারুর জীবনের কথা পড়ছে। এই নাম ও চরিত্রগুলো তাদের খুব পরিচিত। কিন্তু সমস্যা মুসলিমদের নিয়ে। একটা চাইজিন মুসলিম শিশুর আবু আর আমিনা নামটি তাদেরকে সকল চাইনিজ শিশুদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। মুসলিমরা সেটাই চায়। তারা চায় মুসলিমদের নামগুলো সব আরবীতে রাখা হবে যাতে শুনলেই তাদের মুসলিম বলে মনে হয়। এই চাওয়াটি পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি লক্ষে। উপমহাদেশে এই কাজটি অত্যন্ত পরিকল্পনা করেই করা হয়েছিল। বাঙালী মুসলমান কেন আব্বা-আম্মা, ফুপু, খালা, দাদা-দাদী, নানা-নানী ডাকে সেটা বুঝতে বেশি জ্ঞান লাগে না।

কোলকাতার পাঠ্য বই নিয়ে এবার সাম্প্রদায়িকরণের অভিযোগ উঠেছে। ভাবছেন বাংলাদেশে যেমন ইসলামীকরণ করা হয়েছে সেখানে বোধহয় হিন্দুকরণ করা হয়েছে? আজ্ঞে না! খবর পড়ে তো আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না পশ্চিমবঙ্গের প্রাইমারী শিক্ষায় ইসলামীকরণ করা হতে পারে! কোলকাতার একটা বাচ্চা আব্বা-আম্মা আর ফুপুআম্মা পড়ে কি অমিত আর অনিতার মত উপলদ্ধি হবে না? প্রশ্ন তুলতেই পারেন- এতকাল যে পশ্চিমবাংলার মুসলমানদের পিসি-মাসি পড়ে একই অনুভতি হচ্ছিল তার কি হবে? আপনার এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয় পুরো লেখাটা পড়ে এতক্ষণে পেয়ে গেছেন তাই না!

রুজভেল্ট হালদার

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular