Atheist Chapter

অন্ধ বিশ্বাস ও আনুগত্যের ফাঁদে

This is the excerpt for a featured post.

ভন্ড নবী বা ভন্ড পীর বলতে কিছু নেই। অর্থ্যাৎ সহি নবী বা সহি পীর বলতেও কিছু হয় না। সবটাই অন্ধ বিশ্বাস আর আনুগত্য। ইদানিং ‘ভন্ড পীর’ ধরা পড়ছে। এটা কোন সভ্য শিক্ষিত ধর্মনিরপেক্ষ মিডিয়ার ভাষা হতে পারে না। এটা বিশ্বাসীদের ভাষা। নবী বা পীর বিষয়টিই অতিপ্রাকৃত জ্বিন-ভূতের মত ব্যাপার, ‘আসল ভূত’ ‘নকল ভূতের’ মতই হাস্যকর বিভাজন এটি। প্রফেট মুহাম্মদের প্রতিদ্বন্দি দুজন নবী ছিলেন। তুলায়হা এবং মুসায়লামা। তাদের উম্মদদের সংখ্যা মুহাম্মদ জীবিতকালেই ছিল বিস্ময়কর রকমের বেশি। নবী মুসাইলামার সাহাবীদের নিয়ে গঠিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল চল্লিশ হাজার! এ থেকে তার উম্মদের সংখ্যা অনুমান করা যায়।

নবী তুলায়হা এবং মুসায়লামা দুজনের কাছেই জিব্রাইল আসত; অর্থ্যাৎ তারা সেটা দাবী করতেন। মুসায়লামা তার উম্মদদের কাছে, তার সাহাবীদের কাছে কি বলতেন সেটা শুনলে তাকে কথিত ‘সহি নবী’ থেকে আলাদা করা যায় না। মুসায়লামা তার সাহাবীদের কাছে বলতেন, ‘বিচার দিবসে তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে মুক্তি দিবেন ও জীবন দান করবেন। সৎ ও নেক লোকদের মঙ্গল দোয়া আমাদের উপর বহাল আছে। যারা পাপিষ্ঠ ও দুরাচার নয়, তারা তোমাদের মহান রবের উদ্দেশ্যে রাত জেগে ইবাদাত করে এবং দিনের বেলা সওম পালন করে। তিনি মেঘমালা ও বৃষ্টিপাতের নিয়ন্ত্রক।…তোমরা মদ পান করো না, বরং হে নেকদার লোকেরা তোমরা সওম পালন করো। আল্লাহ মহাপবিত্র…’।

মুসায়লামার উপর নাযিলকৃত ওহি কুরআনের মতই কিছু পদ্য ছিল। মুসায়লামা তার উপর নাযিলকৃত ওহি আবৃত্তি করতেন। যেমন: ‘তুমি কি লক্ষ করেছো তোমার রব গর্ভধারীনির সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি তাদের মোটা পর্দা ও তীক্ষ্ম পর্দার মাঝ থেকে চলমান শিশু বের করেছেন…’। আশ্চর্য যে এসব শুনেই মানুষ তার উপর বিশ্বাস আনত। তারা মুগ্ধ হয়ে বলত, আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আপনি আল্লাহ’র নবী!
(দেখুন:আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির, ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৭৮ থেকে-)

নবী তুলায়হা নবী মুসায়লামা দুজনের উম্মদরাই নামাজ পড়ত। তারা সকলেই তাদের নবীদের জন্য মরতে প্রস্তুত ছিল এবং তারা সেটা করেও দেখিয়েছে। খালিদ বিন ওয়ালীদের বাহিনীর নৃশংসতার কাছেও তারা তাদের নবীর উপর থেকে আস্থা ত্যাগ করেনি। কিন্তু ইতিহাস ছিল প্রফেট মুহাম্মদের পক্ষে। তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে সেটা তিনি জীবিত অবস্থায় নয়। তিনি বেঁচে থাকাকালেও এই দুইজন নবী বেঁচে ছিলেন। প্রফেট মুহাম্মদ মারা যাবার ষাট দিনের মধ্যে ইসলামের জন্য টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। একদিকে মুসলমানরা দলে দলে ধর্ম ত্যাগ করে ফেলছিল। অন্যদিকে তুলায়হা আর মুসায়লামা নবীর শক্তিশালী অবস্থান ইসলামের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। সেনাপতি খালেদ বিন ওয়ালী বলতে গেলে ইসলামকে রক্ষা করেছিলেন একা। এই লোকটি ছিল একটি নরপিশাচ। ইসলাম ত্যাগীর মাথা কেটে চুলার তিন মাথার একটি হিসেবে সেই কাটা মন্ডু বসিয়ে তার উপর হাড়ি রেখে তিনি নিজের জন্য খাবার রান্নার ব্যবস্থা করেছিলেন। হতভাগ্য লোকটির সদ্য বিধ্বা স্ত্রীকে ধর্ষণও করে খালিদ। তার এই নৃশংসতায় স্বয়ং হযরত উমার পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন।

নবী মুসায়লামার পরাজয় এবং মৃত্যু ঘটে। এটা তার নবীত্বে ভুয়াত্বকে নাকি প্রমাণ করে। যুক্তিবাদীর চোখে এটা সহজ সত্য। কারণ মুসায়লামা আকাশের দিকে চেয়ে যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইত তার কোন অস্তিত্বই ছিলো না। তাই তাকে কেউ এসে রক্ষা করেনি। এখানেই মুসলমানরা ‘ভুয়া নবী’ কথাটা বানাতে শুরু করে। কিন্তু এটাই যদি হয় ভুয়া নবীর সংজ্ঞা তাহলে ৬৮৩ সনে উমাইয়া বংশ যখন কাবাঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল তখন আকাশের কোটি কোটি ফেরেস্তারা কেন সেটা রক্ষা করতে আসল না? আবদুল্লাহ বিন যুবাইর যখন নিজের হাতে কাবাঘরকে ভেঙ্গে হজরে আসওয়াদ নিজের অধিকারে নিয়েছিলেন তখন তো আকাশ থেকে কোন গজব এসে নামেনি? ৬৯২ সনে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের হামলায় কাবা ভেঙ্গে যাবার পরও আকাশের অধিবাসীরা কেন পিনপতন নিরবতা পালন করলেন? ৯৩০ সনে আরেক আক্রমনে জমজমের কুপে মাটি ফেলে বুজিয়ে দেয়া হয়েছিল- কি ঘটেছিল তার পরিপেক্ষিতে? কিছুই নয়। তবু জয়ীরা ইতিহাস লেখে বলে তাতে কোন প্রশ্ন উঠে না। মুসায়লামা মারা যাবার পরও যদি তার সাহাবীরা জিতে যেতো, আরব ব-দ্বীপ দখল করে নিতো- তাহলে তাদের নবী মুসায়লামা হতো ‘মানব জাতির পাপ কাঁধে নিয়ে আত্মৎসর্গকারী মহান এক নবী’! …বাকীরা হতো সব ‘ভন্ড নবী’।

সৈয়দ সজীব আবেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular