Atheist Chapter

বাংলাদেশ এখন আর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নেই

মাত্র পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশ কে একটা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র দাবী করা যেত , ঠেলেঠুলে প্রমাণ দেয়া যেত হ্যাঁ এই দেশে মৌলবাদ শুধু একটা শ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্য আর তাদের কে সমাজ তেমন গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট বিচার করলে আমরা খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। নাস্তিক অর্থাৎ ধর্মে অবিশ্বাসীদের কথা না হয় বাদই দিলাম, ধর্মে বিশ্বাসী মডারেটরাও কি ভাল আছে ? ২০১৩ পর থেকে এপর্যন্ত যাদের হত্যা হয়েছে তারা সবাই নাস্তিক না , বরং তারা আসলে বেশির ভাগই নাস্তিক না। দীপ , জাফর মুন্সি , জগত জ্যোতি এমন অসংখ্য নাম যারা আসলে নাস্তিক ছিল না কিন্তু সবাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছে। লেখালিখি , রাজপথে আন্দোলন করার কারণে এ পর্যন্ত যাদের হত্যা হয়েছে তারা ব্যক্তি জীবনে যাই হোক সবাই একসাথে বলেছে এই দেশ সবার। বাংলাদেশের শিক্ষিত বোধ বুদ্ধি সম্পন্ন প্রতিটা মানুষ মনে করে এই দেশটা সকল বর্ণের সকল ধর্মের সকল অধর্মের মানুষের। মিলেমিশে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখাই সকলের জন্য মঙ্গল। এর পরেও হঠাৎ করে কেন দেশে সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাড়ল ? কেন পহেলা বৈশাখ কে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলা হচ্ছে ? কেন হিজাব কে বাঙালী সংস্কৃতি করা হচ্ছে?
খুব ছোট একটা প্রশ্ন ,

ধরে নেই দেশে সমস্ত নাস্তিক মেরে ফেলা হল , সবাই ধার্মিক হয়ে গেল , এর পরে কি এই দেশে হত্যা , ধর্ষণ , লুটপাট এসব বন্ধ হবে ? প্রশ্নটা ছেলেমানসী আমি জানি । এর উত্তর হল, না বন্ধ হবে না , এই দেশের সরকারি দল , বিরোধী দল সবাই ধার্মিক , রীতিমত ধর্ম পালন করে এবং সেটা জনগণ জানে। এই দেশের পুলিশ , বিচার বিভাগের কর্ণধার সবাই ধার্মিক , তবুও কেন তনুরা ধর্ষিত হয় ? কেন দিনে দুপুরে মানুষ হারিয়ে যায় পরদিন লাশ মেলে ? বাংলাদেশে কি ইমাম হত্যা হচ্ছে না ? মসজিদে হামলা হচ্ছে না ? কয়দিন আগেই তো সিয়াদের মসজিদে হামলা হল । মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী তো নাস্তিক ছিল না তার হত্যার বিচার হচ্ছে না কেন ?

হ্যাঁ দেশে লেখক , সাংবাদিক প্রকাশক মারলে লেখালিখি বন্ধ হবে তখন এই অপরাধগুলো বিচার দাবি করার মত কেউ থাকবে না । লেখক সবাই হয় না কেউ কেউ হয় ।জাফর ইকবাল, জাহানারা ইমাম,অভিজিৎ রায় সেই সব দুর্লভ মানুষ যারা লেখার মাধ্যমে তাদের কাজের মধ্যে সবার সামনে সত্যগুলো কে সহজ করে তুলে ধরেছে । এটাই একজন লেখক আর পাঠকের মধ্যে পার্থক্য।মত দ্বিমত , যুক্তি থাকবেই। সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু লেখক একটা সমাজের একটা দেশের আয়না । দেশে যখন লেখক থাকবে না তখন সত্যগুলো সবার চোখের সামনে থাকলেও দেখিয়ে দেবার কেউ থাকবে না । এই যে সিরিয়াতে রোজ মানুষ মরছে অথচ তারা মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে না , কেন ? কারণ সেখানকার মানুষ কে সত্যগুলো দেখানোর মত লেখক নেই বলে। কেউ তাদের পথ দেখাচ্ছে না । যারা দেখাত তারা সব দেশ ছাড়া অথবা মৃত । একটা জাতিকে দিক নির্দেশনা দেবার মানুষগুলো যখন থাকে না সেই জাতীর পরিণতি কি হয় তার উদাহরন সিরিয়া ,পাকিস্তান , ইরাক , আফগানিস্তান এর মত দেশগুলো।

একটা কথা প্রায়ী শুনি , আমার বাবা মা কে যদি কেউ গালি দেয় আমি কি চুপ করে বসে থাকব ? এই কথা বলে হত্যাগুলো কে সমর্থন দেবার চেষ্টা করে ।
শুনুন , দেশ ধ্বংস হয় খুনিদের কারণে না , দেশ ধ্বংস হয় খুনিদের চাপাতির রক্ত মোছার এই প্রবণতার কারণে। আপনি নিজের অজান্তেই খুনিটার চাপাতির রক্ত মুছে তাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। আপনার বাবা মাকে গালিদেয়া মূর্খটা কে বর্জন করুন । সে বড়জোর মূর্খ কিন্তু খুনি না , কিন্তু যে আজকে খুন করছে সেই খুনিরাই একদিন আপনার আপন কাউকে খুন করবে। খুন করাই তার নেশা। এখন আপনি সিধান্ত নিন রক্ত মুছবেন নাকি বিচার চেয়ে দেশ তথা আপনার পরিবার রক্ষা করবেন । জানেন তো দেশ পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায় না ।

ঘাতক

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular