Atheist Chapter

ইসলাম বিদ্বেষী বলে ছড়ানো প্রোপাগান্ডা

This is the excerpt for a featured post.

নতুবা মাইকেল মধূসূদন দত্ত রামকে অপদার্থ, নপুংষক নির্বোধ হিসেবে এঁকে রাবনকে মহান, জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরলেও মাইকেল ‘হিন্দু ধর্ম বিদ্বেষী’ হয়ে উঠেননি। বাঙালী হিন্দুরা কখনই মাইকেলকে ত্যাগ করেনি। সেকালে হিন্দু ধর্মের প্রবল ব্রাহ্মণ্যবাদ জেগে উঠার জন্য কেউ মধুসূদনকে দায়ী করেনি। বলেনি এসব লিখে মাইকেল হিন্দু মৌলবাদকে উশকে দিচ্ছেন। কিংবা বিসর্জন নাটকে রবীন্দ্রনাথ জয়সিংহকে দিয়ে কালী মূর্তি আছড়ে ভেঙ্গে ফেলার যে প্রচেষ্টা করেছিলেন, রাজা গোবিন্দকে দিয়ে কালীর সামনে পশু বলী বন্ধের যে সামাজিক বিপ্লব দেখিয়েছিলেন তার জন্য রবীন্দ্রনাথকে শুনতে হয়নি তিনি সনাতন হিন্দুদের শত শত বছর ধরে কালী সাধনা, তাকে উপলক্ষ্য করে পশু বলী নিয়ে কটাক্ষ করে অহেতুক সামাজিক অশান্তির চেষ্টা করছেন। রবীন্দ্রনাথকে কেউ জ্ঞান দেয়নি- এসব লেখার বদলে ইংরেজ রাজের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার করে তোলাই প্রধান কাজ। কিন্তু মীর মোশারফ হোসেন যদি বিষাদ সিন্ধুতে আর যাই হোক না কেন, ইয়াজিদ এবং মুয়াবিয়াকে ইতিহাস থেকে তুলে নিয়ে দক্ষ প্রশাসন হিসেবে দেখাতেন তাহলে লেখক হিসেবে মীর মোশারফ হোসেনকে আজকে আমরা খুঁজে পেতাম না প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে।

বারট্রান্ড রাসেলের ‘কেন আমি ধর্ম বিশ্বাসী নই’ কিংবা প্রবীর ঘোষের ‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাসী নই’র মত কেউ যদি লেখে ‘কেন আমি ইসলামে বিশ্বাসী নই’- তাহলেই তিনি ‘ইসলামী বিদ্বেষী’! সে বিপ্লবের শত্রু। উন্নয়ন আর গণতান্ত্রের শত্রু। দেশে এত এত সমস্যা, বেকারত্ব, অপশাসন, ক্ষুধা দরিদ্রতা তার বিরুদ্ধে তরুণদের না জাগিয়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে মাঝখান থেকে মৌলবাদীদের উশকে দেয়া হচ্ছে- এই কথাগুলো যে ‘মালগুলো’ সুযোগ পেলেই নাস্তিক ব্লগাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে দেয় তাদের বেশির ভাগই দ্বিজাতি তত্ত্বের বিষয়ে ঝেরে কাশেন না। এই সাম্প্রদায়িক তত্ত্বের পক্ষে যেমন প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে পারে না, আবার অখন্ড ভারতবর্ষও তাদের এলার্জি। আপাতত দৃষ্টিতে নিজেদের বাংলাদেশী-বাঙালী-প্রগতিশীল হেনতেন দাবী করলেও এরা ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদে’ বিশ্বাসী। আহমদ ছফা বলেছিলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তাকে একটা ছবি দেখিয়েছিলেন যেখানে শেখ মুজিব জিন্নার মৃত্যুতে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন…।

রুশ সাহিত্যিক ফিওদোর দস্তয়েভস্কি বলেছিলেন,”আমরা সবাই গোগলের ওভারকোট থেকেই বের হয়ে এসেছি”। গোগলকে বলা যায় রুশ সাহিত্যের পথপ্রদর্শক। এ কারণেই দস্তয়েভস্কি গোগলকে তাদের উৎস বলেছিলেন। শেখ মুজিবকে বাংলাদেশীদের জন্য গোগলের অনুরূপ বললে বেশি বলা হবে না। সেই শেখ মুজিব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাতা জিন্নার মৃত্যুতে পিতৃ বিয়োগের মত কেঁদেছিলেন এটাকে আড়াল করতে দেশভাগের জন্য হিন্দুদের দায়ী করার মানে হচ্ছে আমাদের দ্বিজাতি তত্ত্বকে স্বীকার করার মত সৎ সাহস নেই। এইদিক দিয়ে কিন্তু ইসলামপন্থিরা খুব সৎ, তাদের কোন ভন্ডামী নেই। তারা দ্বিধাহীনভাবেই বলে, মুসলমানদের আলাদা দেশের কোন বিকল্প নাই। বিপদটা হচ্ছে, ইসলামপন্থিদের সঙ্গে গলা মেলালে নিজেদের সেক্যুলার জীবনযাপন রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তারা তো কোন ইসলামী শাসনে থাকতে চাইবে না। তারা মুসলিম জাতীয়তাবাদী হতে পারে কিন্তু সেটা উপমহাদেশের হিন্দু মুসলিমের সামাজিক ধর্মীয় রাজনৈতিক লাভ ক্ষতির বিষয়। তাই দ্বিজাতিত্ত্বকে সঠিক বলে মেনে নিলে তার ল্যাজ ধরে ইসলামী শাসনকেও স্বাগত জানাতে হয়। এটা যাতে না করতে হয় তাই হিন্দু খেদিয়ে পাকিস্তান বানিয়ে জিন্নাকে নিয়ে কবিতা লিখে স্বাধীন বাংলাদেশে শত্রু সম্পত্তি ভোগ করেও আমরা অসাম্প্রদায়িক দেশ সেক্যুলার দেশ চাই।

বাংলাদেশের যে নাস্তিকই ইসলাম ধর্ম নিয়ে লিখেছেন তাদের সবার কপালেই জুটেছে এই ‘প্রগতিশীলদের’ কটুক্তি। হুমায়ুন আজাদকে কোপানোর জন্য তার লেখা পড়াই যথেষ্ঠ- এটা আজাদের সমসাময়িকরাই বলেছে। এই বঙ্গে কোনদিনই সে অর্থে ধর্মের বিরুদ্ধে, ধর্মের অন্ধত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই হয়নি। উনিশ শতকে কোলকাতা কেন্দ্রিক যে রেঁনেসা তার বড় একটা আঘাত ছিল ধর্মের বিরুদ্ধে। বাংলা অনলাইনে তারই ছোট তরঙ্গকে বলা হচ্ছে -নাস্তিক ব্লগারদের বেশির ভাগই হিন্দু তাই ইসলাম বিদ্বেষী! এসব বলে কি আমাদের থামানো যাবে?

সৈয়দ সজীব আবেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular