১) হেফাজতে ইসলাম মূলত কার সৃষ্টি? কে এর পিছনে রয়েছে? হঠাৎ করে হেফাজতে ইসলামের এত বাড়াবাড়ি কেনইবা বর্তমান সরকার মেনে নিয়ে সেই দাবি কার্যকরের উপর সীলমোহর বসিয়ে দিচ্ছেন? হেফাজতের সাথে বর্তমান সরকারের এত স্বজনপ্রীতি কেন? শুধু কি জনগণের ভোটের জন্য/ ক্ষমতার লোভের জন্য?
না! এর পিছনে রয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সুগভীর রাজনৈতিক চক্রান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি কার্যকর করা শুরু করে প্রধান মন্ত্রী হাসিনা জনগণের যে বিশ্বাস টুকু অর্জন করেছিলেন, আজ সেই বিশ্বাসে ছেদ পড়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রগতিশীল অংশের মধ্যে যারা আপনার দল করেন না অথবা কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন না কিন্তু দেশকে অসম্ভব ভালবাসেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সবসময় চিন্তা করেন এবং আপনার ও আপনার দলের প্রতি সহানুভূতিশীল, সেই বিশাল ‘ভোটব্যাংক’ এর আস্থা হারানোর ঝুঁকি নিলেন আপনি। বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে চলার কথা ছিল না কোনোদিনও। কথা ছিল বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ, স্বাধীন সার্বভৌমত্বের একটি দেশ। হেফাজতিদের সাথে নিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকবেন আর দিনের পর দিন ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ জনগণের সুখ- শান্তি এবং এই দেশে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু খর্ব করবেন এইতো।
২) বি এন পি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় সাথে ছিল যুদ্ধাপরাধী নেকড়ের দল, জামায়েত ইসলামী এবং তাদেরকে মদতদাতা হিসেবে ছিল পাকিস্তান। আর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় পাকাপোক্ত ভাবে থাকতে চাইছেন সঙ্গে নিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ী হেফাজত ইসলামকে আর আপনাদের মদদদাতা হিসেবে আছেন ভারত। আর আপনাদের এই বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের দলাদলিতে পিশে মরছে আমাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ জনগণ।
হেফাজতকে মূলত সৃষ্টি করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বি এন পির সঙ্গে পাল্লা দিতেই ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে পুঁজি করেই তৈরি করা হয় এই হেফাজতে ইসলাম কে। দেশকে শরিয়া আইনের আদলে চালানোর স্বপ্নকে কেন্দ্র করে সুবিধালোভী এরকম অনেক কট্টর মৌলবাদিদের মধ্য থেকে তেঁতুল শফি যখন বাংলাদেশের নারীদেরকে নিয়ে অশালীন এবং অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য (মেয়ে দেখলেই পুরুষদের জিহ্বা থেকে লালা ঝরে) প্রকাশ করে লাইম লাইটে আসে তখন আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এই তেঁতুল শফিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলন। কিন্তু ইসলামকে হেফাজতের নামে, ধীরে ধীরে তেঁতুল শফি ধর্মপ্রাণ অন্ধ জনগণের মাঝে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ক্ষমতার লোভ আর ধর্মের ভণ্ডামির আদলে তৈরি হেফাজতিরা আওয়ামীলীগ সরকারের তোষামোদে উঠে পরে লাগে। আর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে স্বাগত জানিয়ে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকার উপর মোহর বসিয়ে দেয়।
৩) বি এন পির যেমন ছিল জামাতের ধর্মভিত্তিক অপশক্তি তেমনি টেক্কা দেয়ার জন্য আওয়ামীলীগের ধর্মভিত্তিক অপশক্তির নাম হেফাজত ইসলাম। ক্ষমতায় থাকতে হলে হেফাজতের মতো অপশক্তি থাকতে হবে আওয়ামীলীগের। আওয়ামীলীগ সরকার জানে যে, দেশকে চালাতে হলে ধর্মকে নিয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আগেবপ্রবন এই বাংলার জনগণের আস্থা অর্জনে, একমাত্র ধর্মকেই ব্যাবহার করে ধর্মভিত্তিক অপশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। যেমনটি টি করেছিলো জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা এবং বর্তমানে করছেন হাসিনা। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়ার ইচ্ছা নিয়েই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বলেছিলেন দেশ স্বাধীন হলে দেশটি হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আর এই ধর্মনিরপেক্ষ দেশের স্বপ্ন নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ ঝাপিয়ে পরেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে। দেশ স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমার পর, যারা সাধারণ ক্ষমার অযোগ্য ছিল, সেই রাজাকারদের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলো। চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো।
১৯৭৬ সালে মেজর জিয়া জোরপূর্বক ক্ষমতা নিজের দখলে নিলো। গা ঢাকা দিয়ে থাকা এবং পালিয়ে বেড়ানো যুদ্ধাপরাধীরা একে একে বাংলাদেশে ফিরে আসা শুরু করলো। জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন করলো। ধাপে ধাপে ধর্মীয় মোর্চাগুলো একে একে ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে ঢুকে গেল। সংবিধানের শুরুতে যোগ হল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুবিধাবাদীরাতো ব্যাপক খুশি। আস্তে আস্তে একপা দুপা করে জামায়েত ইসলামি তাঁদের উদ্দেশ্য হাসিল করার সুচতুর চক্রান্তের জাল বোনা শুরু করেছিলো। ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে দেশের সংবিধানের উপর স্থান করে নিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মগ্রন্থের বাণী। যে দেশকে স্বাধীন করার জন্য দেশটির সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ একসাথে ঝাঁপয়ে পড়েছিলেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যারা বিপক্ষে ছিলেন, তাদের দেশ গড়ার স্বপ্ন ভাঙতে শুরু হোলো। প্রথম ধাপে মৌলবাদী মোল্লারা সফল হয়েছে। এবার আস্তে আস্তে দেশটাকে গ্রাস করার এবং ইসলামতন্ত্র কায়েম করার পালা।
৪) স্বৈরাচারী, যৌনউদ্দ্যমী এরশাদের আমলেও আরও ব্যাপক পরিবর্তন আসলো। তার অপকর্মের লিস্ট তো আরও বড়। ক্ষমতায় স্থায়ী ভাবে আসন গেড়ে বসার জন্য আর রাতে যৌনক্ষুধা নিবারনের উপরে কেউ যেন আঙুল তুলতে না পারে, সেই জন্য সংবিধানের অষ্টম সংশোধনে ইসলাম ধর্মকে করে দিলো রাষ্ট্রধর্ম। আর শনি ও রবি বারের বদলে শুক্র আর শনি বারকে করে দিলো সাপ্তাহিক ছুটির দিন। যাতে করে মুসল্লিরা যেন শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়তে যেতে পারে। মৌলবাদী কাঠ মোল্লারা তো এবার আরও খুশি। বাংলাদেশে ইসলামতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবার ঠেকায় কে। দিনে দিনে কাঠ মোল্লাদের ক্ষমতাবল বাড়তে লাগলো। সমগ্র দেশে একেবারে গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলোর ভিতরে ঢুকে গিয়ে একটু একটু করে ধর্মনিরপেক্ষ এবং অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণার বীজ বপন করে একটু একটু করে জলসিঞ্চন করা আরম্ভ করলো। মানুষে মানুষে এত ঘৃণা বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও আজকাল বোধহয় দেখা যায় না।
৫) বি এন পি ক্ষমতায় এলে, খালেদার প্রথম আমলে কাঠ মোল্লারা গোলাম আযমকে প্রমোট করে আস্তে আস্তে জামায়েত ইসলামীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো একটু একটু করে। টার্গেট ছিল মন্ত্রিত্ব দখল, এবং দেশ চালনার ক্ষমতা। হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে শিশুকাল পার করে আস্তে আস্তে কৈশোরের দিকে পা বাড়াতে শুরু করেছিলো এই মৌলবাদী কাঠমোল্লারা।
মাথায় কালো কাপড় বেঁধে হাসিনা শুরু করেছিলো তার প্রথম শাসনামল। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা বঙ্গবন্ধু কন্যার ধর্মের এই করুন ব্যবহার আমাদেরকে একটু হলেও বুঝিয়ে দিয়েছিল এই শাসনামল কখনোই সুখদায়ক হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর প্রতিশ্রুতি তো পেয়েছিলাম কিন্তু এর বিনিময়ে আমাদের মতো সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ জনগণদের কি হারাতে হবে তখন হয়তো এত গভীর ভাবে বুঝে উঠতে পারি নাই। হাসিনা হঠাৎ খেলাফত মজলিশের সাথে ঐক্যের ঘোষনা দিয়ে তাদের সাথে নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছিলো। মৌলবাদী মোল্লারা সে সময় সবে মাত্র কৈশোরে পা রেখেছিল। একটু একটু করে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলল, কারন মোল্লাদের চাল ছিলো আরো গভীর, তাদের চিন্তা ছিলো সূদূর প্রসারী।
৬) খালেদার ২য় আমলে,এক লাফে মৌলবাদী মোল্লারা কৈশোর থেকে তরুণ হয়ে ওঠে। এই কাঠ মোল্লাদের ক্ষমতা দখলে, মন্ত্রিত্ব নিয়ে দেশ চালনার ভার নিতে বেশী বেগ পেতে হয়নি। খালেদা বরাবরই পাকিস্তানপ্রেমী। আর খালেদার ৪ দলীয় ঐক্য জোটের সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে, পাকিস্তানীদের পালিত পা চাটা কুত্তার দল এই জামায়েত ইসলামের আমীর গুলোর কাছে একে একে করে মন্ত্রিত্ব দখলে চলে আসে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী নেতা গোলাম আযম, নিজামী, কামারুজ্জামান, দেইল্লা রাজাকার, কসাই কাদের, মীর কাশিম এরা যখন ক্ষমতায় গেড়ে বসলো, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মানুষজন, ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর ৪ লক্ষ সম্ভ্রমহারা নারীগণ দের উপর আঙুল তুলে আবার মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো।
একটু ভাবুন, যারা এই বাংলাদেশ স্বাধীন করার বিপক্ষে স্বাধীনতা বিরোধী আন্দোলন করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে, অসহায় নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে তাদেরকে মেরেছে, বাড়ি থেকে ঘরের মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হায়নাদের হাতে তুলে দিয়েছে, অসহায় মানুষদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি গ্রাস করেছে, বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, সেই রাজাকার দেশদ্রোহীরা যখন মন্ত্রিত্ব পায়, গাড়িবহরে বাংলাদেশের পতাকা ঝুলিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে দিয়ে চলাচল করে, দেশ চালনার ক্ষমতা হাতে নিয়ে ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসে, তখন কেমন লাগবে আপনার? মেনে নিতে পারতেন এদেরকে? এদের হাতে আপনার প্রানের বাংলাদেশের দায়িত্ব ভার তুলে দিতে পারতেন? ভেবে দেখবেন একটু?
মুক্তিযোদ্ধারা এসকল দেখে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছিল, এই দিন দেখার জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম রে বাবা? বুকটা ডলতে ডলতে বলেছিল, বুকে বড় ব্যাথা। হাহাকার করে উঠেছিলো। দুহাতে মুঠো ভর্তি মাটি নিয়ে চিৎকার করে কেঁদেছিল। শহীদের জননী, বাবা, সন্তান, স্ত্রী সকলে কেঁদেছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম প্রতিবাদ করেছিলেন, তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির যারা নেমেছিলেন তাদেরকে এই রাজাকারদের আদেশে, স্বাধীন বাংলার মাটিতে মেরেছিল প্রশাসন। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম পেয়েছিলেন রাষ্ট্রদ্রোহের অপবাদ। সত্যি কথা কি জানেন, মুক্তিযুদ্ধ কোনদিন শেষ হয় নি, মুক্তিযুদ্ধ কখনো শেষ হয় না, মুক্তিযুদ্ধ আজীবন ধরে চলে। এসকল কিছুই হয়েছিলো এই মৌলবাদী কাঠ মোল্লাদের আমলে। তখন কিন্তু এই কাঠ মোল্লারা নীরব ছিল। কারন এদের চিন্তা, প্ল্যান ছিল আরও গভীর, সুদূরপ্রসারী।
৭) আওয়ামীলীগ শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হোলো। একেকজন করে ঘাতকদের বিচার হয়ে শাস্তি কার্যকর হতে লাগলো। শাহাবাগ আন্দোলনের সময় এই কাঠ মোল্লারাই তরুণ থেকে যুবা শক্তিতে পরিণত হতে লাগলো। একের পর এক তকমা দেখিয়ে চলছিলো। ২০১৩ সালের ৫ই মে, আমাদেরকে জানান দিয়ে গেল তারা পূর্ণ যুবাশক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। এর আগেই তারা লালনের ভাস্কর্যটি এয়ারপোর্ট এর সামনে থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। রাস্তায় মিটিং মিছিল করে নারী সাংবাদিকদের পিটালো, শাহাবাগের আন্দোলনকে ধূলিসাৎ করতে, মেয়েদেরকে বেশ্যাদের সাথে তুলনা করলো, শহীদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলনকে হিন্দুয়ানী বলে ধর্ম ভিত্তিক অপপ্রচারনা চালালো। রাস্তা ঘাটে তাণ্ডব করে ভাংচুর করে, নিজেরাই কোরআন পুড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রস্তুতি নিয়েছিলো। ধর্মনিরপেক্ষ সকল লেখক, ব্লগারদের নাস্তিকতার ট্যাগ লাগিয়ে সাধারণ জনগণকে ক্ষেপীয়ে তুললো। এবার তারা প্রস্তুত আসল অভিযানের জন্য। একে একে সামনের সারিতে চলে আসলো, যেখানে হেফাজতের কোন নাম নিশানাই ছিল না, হঠাৎ করে হেফাজতে ইসলাম নামে এরা আত্মপ্রকাশ করলো। তখন বুঝে উঠতে পারি নাই এরা রাষ্ট্রযন্ত্রের দরজার সামনে এসে পরেছে। তখনো বুঝি নাই যে এদের প্ল্যান ছিলো আরও গভীর, আরও সুদূরপ্রসারী।
হাসিনার আমলে জঙ্গিবাদের সর্বোচ্চ প্রসার দেখতে পেয়েছি আমরা। ইসলাম শরিয়া আইন এর প্রচার, শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র, আত্মঘাতী বোমা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, তাগুত সরকার, সকল কিছুই চোখ মেলে দেখলাম। রাতের আঁধারে গোপনে এরা ছোট ছোট স্লিপার সেল বানিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষ এবং মুক্তমনা ব্লগার দের কুপিয়ে কুপিয়ে মেরেছে। তারা আমাদেরকে বুঝিয়েছে এই মৌলবাদী মোল্লাদের সৈন্যরা এবার যুদ্ধের জন্য তৈরি। একেরপর এক ব্লগার, সংখ্যালঘু, পুরোহিত, শিক্ষক, বিদেশীদের হত্যা করার খবর চোখ খুলে দেখেছি। আরও দেখেছি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বৃহৎ আকারের টার্গেট নিয়ে গুলশানের হলি আরটিজেন এর জঙ্গি হামলা। আরও দেখেছি বেঁচে থাকার তাগিদে ব্লগারদের, হিন্দুদের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে। আরও দেখেছি দেশের বিভিন্ন বিভাগে জঙ্গি হামলা এবং নব্য জঙ্গি ধরার অভিযানও।
আরও দেখেছি দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় এদের দুঃসাহসিক প্রভাব। পাঠ্য পুস্তকের আগা গোঁড়া পরিবর্তন করে, ইসলামের আদলে পাঠ্য পুস্তক কে ইসলামি পুস্তক বানিয়ে স্কুলের কোমল মতি শিশুদের হাতে তুলে দিতে। সেখানে প্রখ্যাত সকল লেখকদের লেখা ছেঁটে ফেলে দিয়েছে সরকার এই মৌলবাদী মোল্লাদের ভয়ে। কোমল মতি শিশুরা এখন অ তে পরে অজু আর ও তে পরে ওড়না। সরকার এই মোল্লাদের সকল ইচ্ছাই এক এক করে পূরণ করছে এবং এদের নির্দেশেই সকল কিছু পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দিয়েছে।
৮) মৌলবাদী মোল্লারা এবার রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিতরে প্রবেশ করেছে। সরকারকে বশে নিয়েছে। এবার দেশের আইনের সর্বোচ্চ বিচারালয় দখলের চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে। এবার সেখান থেকেই নির্দেশ দিচ্ছে বাংলাদেশকে পুরোপুরি দখলের মনোবাসনা নিয়ে। মৌলবাদী মোল্লাদের যে উদ্দেশ্য ছিল যে, সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহে রাহমানির রাহিম লেখা থাকবে, সেটা হয়েছে। রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হবে, সেটাও হয়েছে। শুক্রবার হবে সাপ্তাহিক ছুটি, এটাও হয়েছে। এদের একটা ভিত্তির দরকার ছিল, সেটা এরা পেয়ে গেছে, এবার বাড়িঘর তৈরি করে পাকাপোক্ত ভাবে বসেছে। পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে একাডেমিক ধাপ পেরিয়ে গেছে আর এবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে থেমিসের ভাস্কর্যটি সরিয়ে স্থায়ী ভাবে আসন গেড়ে বসবে। সরকার যন্ত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের যে এত বড় ক্ষতি করে যাচ্ছে একটা বারের জন্যও সেটা উপলব্ধি করছে না। শেখ হাসিনা এদের লালন পালন করে বড় করে গড়ে তোলায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছেন। এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে দেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলতে চাইছে এই মৌলবাদী মোল্লারা। এভাবে চলতে থাকলে, সেই দিন হয়তো বেশি দূরে নয় যেদিন দেখবো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ উঠে গিয়ে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে। হাসিনা যদি আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকে এটাও হয়ে যাবে। আর খালেদা এলে তো আরও দ্রুত হয়ে যাবে। তারপর বাকি যা থাকবে হয়ে যাবে ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের নাম নিশানা নিমিষেই মুছে যাবে বাংলাদেশের বুক থেকে। আমাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষেরা আর মুক্তমনাদের জায়গা হবে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে। মৌলবাদী মোল্লারা চাপাতির কোপে টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করবে আমাদের। আমরা হয়ে যাবো ইতিহাসের সর্ব নিকৃষ্ট কাফের আর মুরতাদ।
৯) মুক্তিযুদ্ধ কোনদিন শেষ হয় না, শহীদের তাজা রক্তের দাগ এখনও যেন হাতে লেগে আছে। এখনও বুক ভাঙ্গা চিৎকারে বাংলাদেশর মাটি কেঁপে উঠে বিলাপ করে। এখনও বিধবার সাদা শাড়িতে সদবার লাল শাড়ির রঙ লেগে আছে। এখনও রাতের আঁধারে, সন্তান বাবার স্পর্শ পাওয়ার জন্য হাহাকার করে। এখনও বাবা ছেলে ফিরে আসবে বলে, গভীর রাতেও সদর দরজা খুলে নিথর রাস্তাটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখনো মা সন্তান ফিরে আসবে বলে পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে অপেক্ষা করেন। এখনো প্রেয়সী সেই শিমূল তলে দাঁড়িয়ে, কারো ফিরে আসার অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এখনো অনেক কিছু আগের মতই আছে। শুধু বদলে গেছে আমাদের মস্তিস্ক। এখনো মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো মৌলবাদী মোল্লাদের সুচতুর চক্রান্ত বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু আমাদের মতো হাঁদা বলদ পাবলিকরা কোনদিন এগুলো বুঝতে পারি নাই। কিন্তু যারা বুঝতে পেরেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হুমায়ূন আজাদ স্যার। সে কারনেই তিনি লিখে গিয়েছিলেন তাঁর অমর কথাগুলো-
“তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না। জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের কথা। তার রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলী, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ, মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করে আমাকে পীড়ন কোরো না।
তার ধানক্ষেত এখনো সবুজ, নারীরা এখনো রমনীয়, গাভীরা এখনো দুগ্ধবতী, কিন্তু প্রিয়তমা, বাঙলাদেশের কথা তুমি কখনো আমার কাছে জানতে চেয়ো না; আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, তার অনেক কারণ রয়েছে”।
সূত্রঃ
- দৈনিক জনকণ্ঠ
- দৈনিক ভোরের কাগজ
- বাংলাদেশের সংবিধান
- বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংশোধন
- বাঙলাদেশের কথা (আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম)-হুমায়ুন আজাদ
- অনুপ্রেরনায়, নিঝুম মজুমদার দার লেখা।