Atheist Chapter

অন্য আলোতে সিরাজুদ্দৌলা

একটা লম্পট নবাব যে প্রজাদের ঘরের সুন্দরী যুবতীদের ধরে নিয়ে নিজের হেরেমে তুলত, একটা অত্যাচারী, নিষ্ঠুর নবাব, যার সম্পর্কে বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন, এই বদমাইশের কারণে কোন স্ত্রীলোকই তার সতীত্ব রক্ষা করতে পারে নাই। প্রজাদের পিঠের চামড়া তুলে আনা টাকায় যে ফূর্তি করত- তার পরাজয়ে বাঙালী কেন দুঃখ দেখাতে যাবে? বলছি ‘বাংলা বিহারের মহান অধিপতি নবাব সিরাজউদ্দৌলার’ কথা। এই অল্প বয়েসী শয়তানটি কোনদিক দিয়ে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়ে ভাল ছিল?

ইংরেজের বিরুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী যখন লড়াই করছে তখন বাঙালী কেন ধান ক্ষেতে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল- বাঙালী কেন প্রতিবাদ প্রতিরোধে মুখর হয়নি- এই আক্ষেপ বামাতী কথাসাহিত্যিক, ব্লগার কিলিংয়ের সময়ের অন্যতম রাজাকার জনাব পাকা পায়খানা তালুকদার সাহেবের। আগেও দেখেছি, বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিকরা বঙ্গে মুসলিম আগমন এবং তাদের মহান ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব দেখে দলে দলে স্থানীয়রা মুসলমান হয়েছিল- এইরকম প্রচলিত গল্পগুজবকে ভিত্তি করে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন। ইতিহাসে যার মিমাংসা নেই, বঙ্গের মুসলমানদের নিউক্লিয়াস যেহেতু অমিমাংসিত সেখানে সুফিদের মহান দেখিয়ে ইসলামের জয়গান গেয়ে এইসব কথিত প্রগতিশীল সাহিত্যিকরা আমাদের সামনে দুটো জিনিস দাঁড় করান- হয় এদের কোন পড়ালেখা গবেষণা নেই। নতুবা এরা আগাগোড়াই মুসলমান সাম্প্রদায়িক মানসিকতার লোকজন…।

‘পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাবার’ মত ইতিহাসের শিরোনাম যারা লিখেছিলেন নিশ্চিত করেই তারা নিজেদের কেবল মুসলমানই ভাবতেন। আফগান, তূর্কি আরব রাজবংশগুলো নিজেদের মুসলমান জাতি হিসেবেই মনে করত। ইতিহাসে তাদের শাসনামলকে মুসলিম শাসনই বলা হয়। কাজেই পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ বেনীয়াদের হাতে মুসলমানদেরই পরাজয় ঘটেছিল তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সেটা কি করে বাংলার স্বাধীনতা হরণ হয়? কোন বাঙালীই এই ইতিহাস মেনে নিবে না। বাংলা ভাষী মুসলমানদের জন্য অবশ্য নবাবের পরাজয় তাদেরই পরাজয়।

নবাবের বাহিনী যখন ইংরেজদের হাতে পরাজয় নিশ্চিত করল তখন বাংলার কৃষকের কোন জয় পরাজয়ই ঘটেনি। সিরাজউদ্দৌলা বাঙালী ছিলেন না। সিরাজের নানা আলিবর্দি খাঁ মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে ছিলেন। মারাঠারা ভারতবর্ষের সন্তান হলেও তারাও বাংলার মানুষ ছিলেন না। সেন রাজাও যেমন বাংলায় বহিরাগত ছিলেন। পাল রাজাই ছিলো বাংলার নিজস্ব রাজা। রাজা শশাঙ্ক ছিলেন প্রথম বাঙালী যিনি সাত শতকের দিকে বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার অধিপতি ছিলেন। পরে পালরা চারশো বছর রাজত্ব করেছিলেন বাংলায়। পালরা দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেনদের হাতে ক্ষমতা হারায়। আর সেনদের হাত থেকে মুসলমানরা ক্ষমতা নিয়ে নেয়। সেই মুসলমানরা পরাজিত হলো ইউরোপীয়ানদের হাতে পলাশীর প্রান্তরে ১৭৫৭ সালে। তাহলে কেমন করে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য সেদিন অস্ত গিয়েছিল? এমন ইতিহাস যারা আজো বয়ে বেড়ান তারা বড়জোর বাংলা ভাষী মুসলমান হতে পারেন- এর বেশি কিছু না…।

সৈয়দ সজীব আবেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular