Atheist Chapter

বিবিধ প্রসঙ্গ

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসিন আলীর পূত্রের বিয়োগান্ত ব্যাপারটি নিয়ে একযোগে কিছু মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখলাম। মূলত এদের অনলাইনে সব সময় সরব দেখা যায়না। এদের মধ্যে অধিকাংশই আমাদের দেখলেই বলে, ঐ যে চেতনার ধ্বজাধারী আসছে, ওই যে চেতনাবাজ আসছে, ওইযে অনুভূতিবাজ আসছে। এইভাবে কটাক্ষ করে এরা কেমন যেন স্বর্গীয় একটা অনুভূতি পায়। এদের সামনে আমরা হচ্ছি অনেকটা জোকারের মত। যারা মনে করে একাত্তর নিয়ে কথা বললেই সে হচ্ছে চেতনাবাজ, চেতনার ব্যাবসা করে নাকি খাই আমরা।

ইদানীং আরেকটা কথা সংযোগ হয়েছে, সেটি হচ্ছে শাহবাগী। “ঐ যে শালা শাহবাগী যায়”, ইস্ট লন্ডনের বাসে, ট্রেনে কতবার এমন বুলির শিকার হয়েছি। ইয়ত্তা নেই।

শাহবাগে কিন্তু আমরা কোনো অন্যায় কারনে যাইনি। গিয়েছি একজন খুনীর ক্ষেত্রে সুষ্ঠূ বিচারের দাবীতে। অথচ এই মহৎ চাওয়াটিই যেন ওদের কাছে এক ধরনের আতংকের মত। কেন চাইবে বিচার? কেন বলবে মুক্তিযুদ্ধের কথা?

আমি এতদিন অনলাইনে থেকেও বুঝতে পারিনা যে এই মানুষগুলোও তো বাংলাদেশের জল হাওয়াতে বড় হওয়া। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শে অমিল থাকলে থাকুক। সে থাকতেই পারে। কিন্তু ১৯৭১ প্রশ্নে কেন এই অমিল? কেন থাকবে এই ভিন্ন মত? আমি আজো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি।

গত ৭-৮ বছর ধরে যে সংগ্রাম টা নিয়মিত চালাচ্ছি ট্রাইবুনাল, মুক্তিযুদ্ধ এসব সব কিছু মিলিয়ে।সেসব অভিজ্ঞতা একত্র করলে হতাশা আর প্রেরণা এই দুটোরই রেশ পাওয়া যায়। ভীষন বিষাদ গ্রস্থ হবার মত যেমন ঘটনা রয়েছে তেমনি প্রচন্ড আনন্দ উদ্বেলিত হবার মত ঘটনা রয়েছে।

এই অনলাইনেই যেমন আরিফ রহমান এর মত ছেলেরা বের হয়ে এসেছে। এরা অনলাইনেরই তৈরী। মেইড ইন অনলাইন। যে কিনা হঠাৎ করেই পন করে বসেছে ৩০ লক্ষ শহীদ নিয়ে সে সারাজীবন পার করে দেবে। হালকা পাতলা গড়নের সাধারন একটা ছেলে। অথচ তাঁর স্বপ্নটা কি অসাধারণ!! এই গত বই মেলাতেই সে দুনিয়ার সব তথ্য, উপাত্ত, রেফারেন্স নিয়ে দেখাতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধে আসল শহীদের সংখ্যা। কংক্রীট এভিডেন্স নিয়ে আরিফ হাজির হয়েছে। বের করে ফেলেছে একটি অসাধারণ বই।

আবার এই অনলাইনেই একজনকে পেয়েছিলাম যিনি আমাকে বলেছিলেন একাত্তরে যদি পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের শাস্তি হয় তবে মুক্তিযোদ্ধাদের কেন শাস্তি হবেনা কেননা তারাও নাকি খুন করেছেন। এই প্রশ্ন যে একজন বা দুইজন করেছে তা না, ইদানীং কিছু সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শীদের এগুলো বলতে দেখি।

মহসিন আলী যে পূত্রের কথা বলেছেন বা যে লেখাটি আমরা অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে পেয়েছি সেটি নিয়ে অনার্য দা এবং প্রলয় ভাই খুব চমৎকার দুটি ভাবনার যোগান দিলেন। তাঁরা বললেন, পূত্র বলতে যে একেবারে নিজের ঔরসজাত হতে হবে এমন কথা কোথায় লেখা আছে? হতে পারে মহসিন আলীদের পুরো মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপে কোনো কিশোরকে তিনি পূত্রসম ভালো বাসতেন। ইনফ্যাক্ট যুদ্ধের ময়দানে তো সহযোদ্ধা ভাই হতে পারে, পূত্র হতে পারেম ভগীনি হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের এইভাবে গড়ে নিয়েছে। এটি তো ছিলো আমাদের স্বাধীনতা আর অস্ত্বিত্ব ফিরে পাবার লড়াই। আর বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে পূত্রসম ভালোবাসা, কন্যাসম ভালোবাসা এগুলো তো আমাদের উদার সংস্কৃতির একটা সাবস্টেনশিয়াল অংশ।

অনলাইনে এলেই কিছু মানুষ যেন এই বলেই মজা পায় ৩০ লক্ষ আসলে শহীদ হয়নি, হয়েছে ৩ লক্ষ। আবার এই কথা বলার সময় ঠোঁট উলটে বলে, তিন লক্ষ অবশ্য কম না। ১০ জন মারা গেলেও সেটিও গণ হত্যা। এই এক্সক্লুশন ক্লজটি তারা দয়া করে লাগায় কেন জানেন? এটি তারা দয়া করে লাগায় কারন এই কথার সূত্র ধরে তারা ৫ মিনিটের ভেতরই বলে বসে হেফাজতের আন্দোলনে নাকি গণ হত্যা হয়েছে। সেখানে নাকি তিন হাজার আলেমকে মেরে ফেলেছে। অথচ তাদের যদি প্রশ্ন করি সংখ্যাটি কিভাবে নিরূপিত হোলো, তখন তারা আমাদের পালটা প্রশ্ন করে আপনি ৩০ লক্ষ যেভাবে পেয়েছেন।

এইভাবে তর্কের পর তর্ক চলতে থাকে। প্রতিদিন সেই একই ইস্যু। একই টেনশন। মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পরেও বাংলাদেশে এই নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে কেউ কি তা ৪৪ বছর আগে ভেবেছে?

আজকে ডাক্তার জাফরুল্লাহ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জামাতের পক্ষে লড়াই করছে, কাদের মোল্লার ফাঁসীর পর এই দুইজনই টকশোতে গুজব ছড়িয়েছে এই বলে যে এই কাদের সেই কাদের মোল্লা না। সাম্প্রতিক সময়ে জাফরুল্লাহ সাকা চৌধুরী অপরাধী কি অপরাধী নয় এটি নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। দুইজন মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে এসব করতে পারেন? ডেভিড বার্গ্ম্যানের মত একটা পাঁড় জামাতী এজেন্টের পক্ষে জাফরুল্লাহ সাহেব বিব্ররতি দিয়ে সাজাও খেটেছেন সম্প্রতি।

আমরাও তো মানুষ। ক্লান্তি লাগে। মাঝে মধ্যে অস্থির লাগে। প্রায়ই ভাবি এসব ছেড়ে ছুড়ে দেব। প্রায়ি ভাবি এসব নিয়ে আর না। কিন্তু পারিনা সে ভাবনায় স্থির থাকতে। ঐ যে বললাম খুব অস্থির লাগে।

আব্বা মুক্তিযুদ্ধের যে গল্প শুনিয়েছেন, যে মূল্যবোধ আমার ভেতর গেঁথে দিয়েছে্ন, আমার মা মুক্তিযুদ্ধের যে বিভীষিকার গল্প বলেছেন, যে মৃত্যুর কথা বলেছে্ন আমি তো সেই গল্পে বেড়ে ওঠা একজন যুবক। আমি আমার মা বাবার মুখ থেকে ইতিহাস শুনে বড় হয়েছি। বার বার মনে হয় আমার বাবা যেই মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য তাঁর সব দিয়েছেন, যেই বাবা গত ৪৪ টা বছর দেশের জন্য কাজ করেছেন, আমি কি করে হাল ছেড়ে দেই তাঁর সন্তান হয়ে?

তাই ক্লান্ত লাগে। অস্থির লাগে। এতসব মিথ্যাচারে টিকে থাকবার যে যুদ্ধ, মাঝে মধ্যে সেইসব যুদ্ধে নিজেকে খুব অসহায় লাগে।

সৈয়দ সজীব আবেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular