Atheist Chapter

একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র ও একজন সাহসী বিচারপতি

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্র যখন ঠিক এইভাবে ট্রিট করে তখন আর বুঝবার বাকি থাকেনা যে সে রাষ্ট্রের ভেতরের অবস্থা কেমন।

বিচারের রায় সরকারের পক্ষে যায়নি, প্রাইমা ফেসী এই হচ্ছে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র “অপরাধ”। যদিও দলীয় কর্মী কিংবা নেতারা এটিকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে বলেন যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির অবজার্ভেশনের বিপক্ষে তাদের অবস্থান।

আমি এই রায়টি (হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগের রায় সহ) এই নিয়ে দুইবার পড়েছি কিন্তু কোথাও আপত্তির কিছু খুঁজে পাইনি। যা খুঁজে পেয়েছি তা হোলো একজন বিচারপতি লড়াই করছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য। তিনি মনে প্রাণে চাইছেন বিচারবিভাগ সার্বভৌম হোক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে প্রদত্ত ৭৯৯ পৃষ্ঠা রায় কিংবা হাইকোর্ট বিভাগের ২৯০ পৃষ্ঠার রায়ের পুরোটা এই নেতা কর্মীরা পড়ে দেখেনি। পুরো ব্যাপারটাই শুধু হাওয়াতে তলোয়ার চালানো, আর কিছু নয়।

আওয়ামীলীগের তথাকথিত “বড় বড়” নেতারা প্রধান বিচারপতিকে ছিঁচকে উকিল থেকে শুরু করে নোংরা গালাগাল, কোনোটা করতেই বাদ রাখেনি। কেউ কেউ তো বলেছেনই, “পদ তো তুমি হারাবেই প্লাস দেশও ছাড়তে হবে”। তাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত।

জনকন্ঠের স্বদেশ রায় কিংবা একাত্তর টেলিভিশন উঠে পড়ে লেগেছিলো প্রধান বিচারপতি যথাক্রমে জুডিশিয়াল ক্যু করবার চিন্তায় ছিলেন কিংবা তাঁর অনেক অবৈধ সম্পদ রয়েছে। স্বদেশ রায়কে আদালত অবমাননার জন্য আপীল বিভাগ যে শাস্তি দিয়েছিলো একটা সময় সেটির প্রতিশোধ তুলবার জন্য তিনি তার মনে যা আসছে, তা-ই লিখে যাচ্ছেন ক্রমাগত।

প্রধান বিচারপতির জুডিশিয়াল ক্যু কেউ আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেন নি কিংবা কেউ আজ পর্যন্ত তাঁর করা কথিত দূর্নীতির প্রমাণও দিতে পারেন নি। বাংলাদেশের জনগন ভোদাই চন্দ্র না। তাঁরা চোখের সামনে সবই দেখতে পেয়েছেন। বলতে ভয় পায় পাব্লিক, তাই চুপ করে আছেন। দেশে গিয়ে এইবার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুন যুবক-যুবতী কিংবা কিশোর বয়সী ছেলেদের কাছ থেকে শুনেছি এই কথা যে, “সরকার প্রধান বিচারপতিকে পর্যন্ত খায়া দিলো”

জনগণের এই ভেতরের অনুধাবন, তাঁদের এই ঊষ্মা রাষ্ট্র থোরাই কেয়ার করে। নির্বাচনের চিন্তা নেই, দেরশো-দুইশো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবার সুযোগ থাকলে জনতাকে কেয়ার করবার দরকারই বা আর কি? এটাও আমরা বুঝতে পারি।

ওলামা লীগ তো প্রধান বিচারপতি যেদিন থেকে নোমিনেটেড হলেন সেদিন থেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে একজন “বিধর্মী”-কে সেই স্থান থেকে অপসারণের ডাক দিয়েছিলো। আজকে কেবল তাদের মূল দল সে দাবীকে পরিপূর্ণ করেছে, মাঝখানে কেবল সময়ের যা পার্থক্য, এই যা।

শুধু ভেতরে এক ধরনের দহন হয়। নিম্ন আদালতকে বহু আগেই এই পার্লামেন্ট কব্জা করে ফেলেছে। নিম্ন আদালতে অর্থের বিনিময়ে জামিন, রায় সব কিছুই বেচাকেনা হয় বলে শুনেছি কিংবা প্র্যাকটিসিং আইনজীবিদের কাছে শুনতে পাই। এবার কব্জা করা হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। এটি যে কি ভয়ানক লজ্জা আর অপমানের এবং শংকার, সেটি আর কাউকে খুব সম্ভবত বলে দিতে হবে না।

ছেলেবেলার একটি কবিতা মনে পড়ছে, ইংলিশ ফর টুডে তে পড়েছিলাম। কবিতার নাম মনে নেই। লংফেলো’র কবিতা বোধকরি। নিশ্চিত নই। একটি নেকলস চুরির অপরাধে কাউকে শাস্তি দেয়া হয়েছে কিন্তু দেখা গেলো সেটি আসলে চুরি হয়নি একটি পাখি তাঁর বাসা বানাবার কাজে সেটি নিয়ে এসেছে। আর বাসাটা বানিয়েছে সেই বিচারালয়ের সামনে ভাঙ্গা ও হেলে যাওয়া জাস্টিসিয়ার ভাষ্কর্যের-ই ভেতর।

দেশটা এখন ঠিক এইভাবেই চলছে। হীরক রাজার দেশে একটি দেশ ঠিক যেভাবে চলে…

ইয়াজ কাওসার

লেখালেখি করা আমার প্যশন। ভালো লাগে ধর্ম, আশে পাশের মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, জীবন-যাপন ইত্যাদি নিয়ে লিখতে। বিশ্বাসের দিক থেকে নাস্তিক। সংক্ষেপে বলতে গেলে মানবতাবাদী হয়ে উঠাটাই আমার আদর্শ। আমার ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular