Atheist Chapter

“বাবুই পাখিরে ডাকি কহিছে চড়াই, কুড়ে ঘর থেকে কর শিল্পের বড়াই” রজনীকান্ত সেনের এই স্বাধীনতার সুখ কবিতার জন্য জীবনে এক ভয়াবহ মার খেতে হয়েছিলো “পাকনামির” অভিযোগে। ক্লাস থ্রি বা ফোর হবে। পড়তাম শের এ বাংলা নগর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এই কবিতাতে আমাদের স্কুলে শেখানো হোতো এখানে বাবুই হচ্ছে খুব ভালো পাখি, সে বড়াই করে না। কিন্তু চড়ুই করে। অন্যের বাসায় থেকে বড়াই করে।

আমি শুধু শিক্ষিকা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম (ওই স্কুলে আমরা শিক্ষিকাকে আপা ডাকতাম), আপা, “বাবুই পাখি যে এত বড় বড় কথা বলছে তার শিল্প সম্মত বাড়ী নিয়ে, যেই গাছে সে বাড়ীটা বানালো, সেটা কি বাবুই পাখির নিজের?

হয়ত আমার প্রশ্নে ভুল ছিলো সুতরাং ব্যাপক মার খেতে হোলো। কিন্তু আজও আমার সেই প্রশ্ন যায় নাই। ছোটো বেলা থেকেই আমরা প্রশ্নের উত্তর পাইনা। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেক কিছু এড়িয়ে যেতেন আমাদের কাছ থেকে। আর এইসব ব্যাখ্যাহীনতা আমাদের ভেতর জন্ম দিয়েছিলো বিষাদ। করেছিলো বিভ্রান্ত।

অন্যের অট্টালিকায় যেমন চড়্রুই থাকে ঠিক তেমনি বাবুই পাখি থাকে অন্যের তাল গাছে। দুইজনই অন্যের সম্পত্তিতে থাকে। যদিও কবিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, কাউকে অহংকারী না হতে বলা, বড়াই না করা। কিন্তু যে উদাহরন দিয়ে এই ব্যাপারটির ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে, সেটি ঠিক কতটা যৌক্তিক বা সঠিক?

আবার প্রাইভেট টিউটরের কাছে মার খেয়েছি সেই “কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়। তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়” কবিতার জন্য।

আমার সহজ প্রশ্ন ছিলো কুকুর কামড়ালে তাকে আমি কামড় দেব কেন? লাঠি দিয়ে বাড়ি দেব।

এই সময়ে এসে আমার মনে হয় আমরা ভুল শিখেছিলাম। সেই কুকুরের কবিতা দিয়ে আমাদের শেখানো হয়েছিলো যে একজন খারাপ ব্যাক্তি খারাপ কাজ করলে তাকে সেই ভাবেই ট্রিট করবার দরকার নেই। কারন সে খারাপ ব্যাক্তি। সে কামড় দেবে আর তুমি মুখ বন্ধ করে বাসায় চলে আসবে।

শৈশব থেকেই আমাদের মাথা নীচু করে থাকাটা শেখানো হয় এইসব গল্প কবিতার ব্যাখ্যা দিয়ে। মনে হয় এগুলো যেন ছিলো দৈব বাণী।

আমার কেন জানি মনে হয় আমাদের স্কুলিং-এ ব্যপক সমস্যা আছে। অদ্ভুত সব জিনিস পত্র শেখানো হয়। সঠিক ব্যাখ্যা নেই, সঠিক তর্জমা নেই। আর এসব প্রত্যেকটি জিনিস আমাদের ভেতর ছোটো বেলা থেকেই প্রভাব বিস্তার করে।

যেমন ওই অজগর আসছে তেড়ে।

এসব কি? অজগর দিয়ে ছোটো বেলা থেকে ভয় দেখাবার মানে কি?

আমার মনে আছে আমাদের এক শিক্ষিকা সামাজিক বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা বেশী কেন এটা বই থেকে পড়ছিলেন। সামজিক বিজ্ঞান বই তে লেখা ছিলো গ্রামে গঞ্জে বিনোদোনের অভাব তাই সন্তান বেশী হয়…এই জাতীয় কিছু একটা।

আমার সেই বন্ধু সা’দ মুনীর ক্লাসেই জিজ্ঞেস করে বসেছিলো বিনোদনের কারনে সন্তান বেশী হয় কেন?

ক্লাসে নেমেছিলো এক অস্বস্তিকর অবস্থা।

অথচ যৌন বিষয়ে শিক্ষা দেয়াটা কতটা জরুরী একটা সুনির্দিষ্ট ক্লাস থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলোকে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় বলে ধরা হয়। কেন ধরা হয় কে জানে?

একটা সুনির্দিষ্ট সময়ে ছেলে-মেয়েরা যৌনতায় আগ্রহী হয়, এগুলো নিয়ে ভাবে সুতরাং তাঁদেরকে এইসব বিষয়ে বলা, শেয়ার করাটার মত জরুরী ব্যাপারগুলো কেন আমাদের দেশে হয়না, আমি জানিনা। খুব সম্ভবত বাচ্চাদের সাথে যৌন বিষয়ে কথা বলা আমাদের দেশে একটা ট্যাবু বা নিষিদ্ধ বিষয়।

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন বাচ্চাদের সাথে যৌনতা নিয়ে কিসের আলাপ?

উত্তরে আমি বলব একজন ছেলে বা মেয়ের বয়ঃসন্ধি কালে এইসব বিষয়ে কথা বলা খুব জরুরী। যেমন মাস্টারবেশন, পর্ন, পিরিয়ড এইসব বিষয়। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে অস্বস্তির কি আছে। বাবা মা সুন্দর করে ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে বললেই কিন্তু আর এই অস্বস্তি থাকেনা।

গোপনে আমরা চটি পড়তাম, পর্ন দেখতাম সেগুলোতে কোন সমস্যা হতো না, হতো শুধু বলতে গেলেই।

আবার একটা বাচ্চা বড় হলে তার প্রথম শেইভ করতে হয় লুকিয়ে। আমি করেছিলাম আমার বাবার রেজার দিয়ে। জানিনা এই সময়ে এইসব সমস্যা আছে কিনা। অথচ কথা ছিলো মোচ দাড়ি উঠলে বাবা-মা-ই বলবে শেভ করতে। তাঁরা কিনে দেবে রেজর, ক্রীম…

আমার ছেলে সারাটা দিন রাত তাঁর বিখ্যাত “হোয়াই” দিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। আমি ধৈর্য্য ধরে উত্তর দেই। দিতে হবে। বাচ্চাদের মনের এইসব সীমাহীন প্রশ্নের উত্তর না দিলে একদিন এরা খুব বিভ্রান্তি নিয়ে বড় হবে, বিষাদ নিয়ে বড় হবে। এরা প্রশ্ন করতে ভুলে যাবে। প্রতিবাদ করতে শিখবে না, বলতে শিখবে না।

এইসব সব বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম আজকে। তাই শেয়ার করে ফেললাম আপনাদের সাথে।

আপনাদের ভাবনা কি সমাজের এইসব বিষয়গুলো নিয়ে?

সৈয়দ সজীব আবেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular