Atheist Chapter

দূর্নীতির কতকথা

মাত্র দুই কোটি সামথিং! এই বাক্যটা কয়দিন হল আশপাশে খুব শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয় এবং রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা সেই টাকার অধিকাংশ বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদ গড়ে তোলেন। মানুষের মনের এই ধারণা সত্য কী মিথ্যা সে সিদ্ধান্ত আপাতত আমি দেবো না। বলছিলাম সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকা দুর্নীতি বিষয়ক বদ্ধমূল ধারণা প্রসংগে। সেক্ষেত্রে ‘দুই কোটি সামথিং’ এই অংকের জন্য খালেদা এবং তারেকের শাস্তি হওয়ায় তারা অন্যান্য শাসক দলের ( জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগ) চেয়ে কম দুর্নীতিবাজ হিসেবে জনমানসে আবির্ভুত হলেন। যদিও আওয়ামী লীগ বিগত বিএনপি সরকারের শাসনামল থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ করে আসছে। সেসব দুর্নীতির পুরোটাই উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ক দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত-যেমন তারেক ও গিয়াস আল মামুনের বহুল আলোচিত ‘খাম্বা’ ইস্যু। খালেদার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতি মামলা পরিচালনার উদ্যোগ যে সরকারের উৎসাহে হয়েছে তা সবারই জানা। ১/১১ এর কেয়ারটেকার সরকারের করা এ ধরণের দুর্নীতি মামলা শেখ হাসিনা সহ আরো অনেকের বিরুদ্ধেই করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেরকম অগনিত মামলার মধ্যে থেকে বেঁছে বেঁছে খালেদার বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে যখন দুদক উঠেপড়ে লাগে তখন এর পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বুঝতে কোনো বেগ পেতে হয় না। লক্ষনীয় যে উন্নয়ন প্রকল্প বা আর্থিক খাত থেকে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল–তার কোনোটিকেই কিন্তু আইনীভাবে এস্টাবলিশ করা হয়নি। বস্তুত সেটা করার কোনো নৈতিক ভিত্তিও লীগ সরকারের ছিল না। কারণ উন্নয়ন প্রকল্প বা আর্থিক খাত ( রাস্তা-ব্রিজ-ফ্লাইওভার, স্টক মার্কেট-ব্যাংক ইত্যাদি) থেকে বর্তমান লীগ সরকারের সময়ে ঘটা দুর্নীতি ও লুটপাটের যে অভিযোগ (পত্র-পত্রিকা ও বিশ্লেষকদের পর্যালোচনা অনুযায়ী) তা বিগত সময়গুলো থেকে টাকার অংকে কয়েকশ গুণ বেশি হবে। যেটা বলতে চাইছি তা হল- জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায় বিগত সময়ে তাদের বিরুদ্ধে আরো বড় অংকের দুর্নীতির যে অভিযোগ ছিল সেটা বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেল এবং খালেদা জিয়া তুলনামূলক কম দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন।

একটা সাধারণ প্রশ্ন রেখে শেষ করি। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির সাথে ভেতরের লোক জড়িত আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি না বললেও সবাই ঠিক জানতো যে ভেতরের কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী যুক্ত না থাকলে এই কাজ করা অসম্ভব। কিছুদিন আগে তিনি বললেন-পরিচালকরা ফারমার্স ব্যাংকের পরিনতির জন্য দায়ী। মাত্র কয়েকদিন আগে বললেন-বারাকাত জনতা ব্যাংককে শেষ করে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে–ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেয়া কী দুর্নীতির ধারণার বাইরের কিছু। স্টক মার্কেট সম্পর্কে কিছু বললাম না কারণ ওইটার মৌলিক ধারণার মধ্যেই গ্যাম্বলিং আছে, কিন্তু ব্যাংক তো আর যা খুশি তাই করার জায়গা নয়। তাহলে এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন?

সৈয়দ সজীব আবেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular