Atheist Chapter
আমি কেন অজ্ঞেয়বাদী?

আমি কেন অজ্ঞেয়বাদী?

নাস্তিকতা এবং অজ্ঞেয়বাদ শুনতে একই রকম শুনালেও কিছু পার্থক্য লক্ষনীয়।

ধর্মের ত্রুটি নিয়ে কথা বললে সবাই তার উপরে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় যে সে নাস্তিক।

নাস্তিকতা হল কোন ধরনের ঈশ্বরে বিশ্বাসী না হওয়া। এবং অজ্ঞেয়বাদ হল পরিপূর্ণ প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত কোন কিছুতেই বিশ্বাস স্থাপন অথবা অবিশ্বাস না করা। অজ্ঞেয়বাদীরা কোন বিষয় সম্পূর্ণভাবে না জানা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় না। সংশয়বাদীদের সাথে অজ্ঞেয়বাদীদের অনেকাংশেই মিল রয়েছে যদিও কিছু পার্থক্য বর্তমান।

আস্তিকতা এবং নাস্তিকতার মধ্যে মিল হচ্ছে দুই পক্ষই নিশ্চিত যে তাদের বিশ্বাসটাই সঠিক। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদীরা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত নয় কোন ব্যাপারেই।

আমাদের মহাবিশ্ব অনেক বিশাল, আমাদের কল্পনার বাইরেও। আমরা শুধুমাত্র আমাদের সৌরজগতের ভিতরেই সীমাবদ্ধ। আমরা মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত যেতে পেরেছি। আমাদের সৌরজগতের মত অনেকগুলি সৌরজগত নিয়ে তৈরি একটি গ্যালাক্সি। এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে এই মহাবিশ্বে।

যদি প্রশ্ন করা হয় কে এই মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন অথবা কে এগুলোকে নিয়ন্ত্রন করেন, আস্তিকরা নির্দ্বিধায় বলে দিবে, ঈশ্বর এগুলো সৃষ্টি করেছেন। যদি প্রমান চাওয়া হয় তবে কিছু ধর্মগ্রন্থ প্রমান হিসেবে হাজির করা হয়। অনেকটা সুপারম্যানকে প্রমান করতে সুপারম্যানের কার্টুন বইয়ে তার প্রমানের মত। কিন্তু আসলেই যে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন তেমন কোন প্রমান কেউ আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। আস্তিকতা অনেকটা শর্টকাটের মত। যদি কোন প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে না থাকে, ”এটা ঈশ্বর করেছেন”, ”সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা”, ”ঈশ্বরের খেলা বোঝা বড় দায়” এগুলো বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হয়।

নাস্তিকতাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়। কোন কিছুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে হলেও কিন্তু বিপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি থাকা প্রয়োজন। অনেকেই বলেন যার অস্তিত্ব নেই তার আবার প্রমান কি? হ্যাঁ, প্রমানের দরকার আছে। রোগীর রক্ত পরীক্ষা করেই কিন্তু ডাক্তার প্রমান করেন যে তার রোগ আছে কি নেই। ঠিক তেমনভাবেই যথেষ্ট প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ নয় বলেই আমি মনে করি। আসলেই কি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করছেন নাকি ঈশ্বর নামক কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তিকে যার সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনাই নেই তাকে অস্বীকার করছেন সেটা জানা জরুরী। হয়ত পৃথিবীতে যাকে ঈশ্বর বলে মানা হয় হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে সে অথবা তারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান এবং বিজ্ঞানের উৎকর্ষের চরম শীর্ষে অবস্থান করছে। সেগুলো না জানা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছান আবশ্যক নয়।

আস্তিকরা তাদের ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্যের কথা উল্লেখ করে বলে থাকেন, হাজার বছর পূর্বে যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব নাই থাকতো তাহলে এইসব তথ্য কিভাবে আসলো। তাদের আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, তাদের ধর্মগ্রন্থের আরো অনেক আগে মায়ান সভ্যতা, মেসোপটেমিয়া, গ্রীক সভ্যতা অথবা আদিম যুগের গুহাচিত্রেও আমরা অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য পাই যা আজো আমরা আবিস্কার করতে হিমশিম খাচ্ছি। অনেক গুহাচিত্রে সৌরজগতের মডেল অথবা মহাকাশযানের নিখুঁত চিত্র এবং স্পেসস্যুট পরিহিত মহাকাশচারীর গুহাচিত্র পাওয়া গেছে। তারা অধিকাংশই ছিল প্যাগান ধর্মাবলম্বী। সুতরাং যৌক্তিকভাবেই আস্তিকদের সবার প্যাগান ধর্ম গ্রহন করাই উচিৎ নয় কি?

এই মহাবিশ্বের অনেক রহস্য আমাদের এখনও অজানা। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমরা এগিয়ে চলেছি, হয়ত অদূর ভবিষ্যতে অনেক অজানাকেই জানা যাবে। একমাত্র বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার মাধ্যমেই অনেক অনাবিষ্কৃত তথ্য অথবা ঈশ্বর বলতে কিছু আছে কি নেই কিংবা ভিন্ন গ্রহের বুদ্ধিমান এলিয়েনদের আমরা ঈশ্বর ভেবে বসে আছে কিনা সব প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব।

যতদিন না আমরা সেই উত্তর পাচ্ছি, আমি ততদিন অজ্ঞেয়বাদী।

আরমান আহমেদ

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular