Atheist Chapter

নীলের খুনিদের বিচার হয় না

ওর অপরাধ ধর্মীয় গোঁড়াপন্থির আড়াল থেকে সত্য কে সামনে নিয়ে আশা। ওর অপরাধ শুধু কলমকে যুদ্ধের হাতিয়ার করে নেয়াটা। ওর অপরাধ শুধু সত্য কথা লেখা। ওর অপরাধ নিজের মতো করে বাঁচাতে চেয়েছিল। ওর অপরাধ অন্ধ কুসংস্কার থেকে এই বাঙ্গালি জাতিটাকে আলোর পথে আনার গল্প লেখা। ওর অপরাধ জীবনের সত্যকে খুঁজে পাওয়ার জন্য এই পঙ্গু সমাজের সাথে লড়াই করে যাওয়া। ওর অপরাধ অধর্মকে সমর্থন না করা। ওর অপরাধ ইসলাম ধর্মকে নিয়ে লেখা।

আজ থেকে চার বছর আগে অনুভূতির ইজারাদারদের হাতে প্রাণ দিয়েছে আমাদের বন্ধু নীল। নীল কখনো অনুভুতিওয়ালাদের ক্ষতি করেছে বলেও আমাদের জানা নেই। তাদের চাপাতির বদলে নীলের সম্বল ছিল একটাই; লেখালেখি।

তো সেই লেখালেখি কাদের বিরুদ্ধে ছিল? কারও বিরুদ্ধে আদৌ কি ছিল? নবী রসুল কিংবা অবতারদের ব্যক্তিজীবনের যে কথাগুলো সে লিখেছে, সেটা কি ব্যক্তির বিরুদ্ধে গেছে? এমন তো নয় সে কখনো বানিয়ে বানিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখেছে। যা লিখেছে তা হয় কোন টেক্সট বা ইতিহাস থেকেই লিখেছে। কেন লিখেছে?

অবতারদের প্রতি তাঁদের ভক্ত বা উম্মতদের যে উন্মাদনা, সেটাতো নীল বা যারা যারা লিখেছেন তারা তৈরি করেন নি। নবী-রসূল বা অবতারদের বিরুদ্ধে কিংবা তাঁদের তৈরি টেক্সটের সমালোচনা বা জীবনালোচনা করা যাবে না এমন ফতোয়া যেসব মৌলবাদী দিয়েছেন, নীলেরা তো সেখানে আঘাত করতে চেয়েছেন।

মৌলবাদীরা যে নবী-রসূলদের জীবনাচরণ শুনিয়ে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে, যে কিতাব-পুঁথি বা টেক্সটের ধোঁয়া তুলে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিকভাবে মানুষকে হাজার হাজার বছর ধরে বন্দি করে রেখেছে, যে অলৌকিক শক্তির ভয় দেখিয়ে মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে হরণ করেছে সে ধর্মের, সে আইডলজির মানুষদের ব্যক্তিজীবনের অসঙ্গতিগুলো উন্মোচন করতে চেয়েছে নীল।

যেন আফিমাসক্ত মানুষের মোহমুক্তি ঘটে। যাতে করে তারা এটা অন্তত মনে করে নবী-অবতারদের জীবন আর দশজনের মতই স্বাভাবিক ছিল। ‘রিপুর তাড়নায়’ তারাও অনেক অনৈতিক কাজ করেছেন। যাতে করে সাধারণ ধার্মিকেরা মৌলবাদের কণ্টকাকীর্ণ পথে পা না বাড়ায়। নিদেনপক্ষে যেন মৌলবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।

নীল মৌলবাদী সিস্টেমের সমালোচনা করতে গিয়ে কখনো কখনো সে সিস্টেম যেসকল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তাদেরও ছেড়ে কথা বলেনি। আইডওলজির কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আইডলদের নামও চলে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক, নীলরা যাদের জন্য লিখতে চেয়েছে তাদের তো উপলব্ধি হয়ই নি, কখনো কখনো আমরাও তাদের বুঝতে পারি নি।

নীল আজ নেই। আমাদের অনেক বন্ধুই আজ নেই। তবে সেই পুরনো প্রশ্ন আবার নতুন করে মনে জাগে-কাদের জন্য এই জীবনোৎসর্গ? যাদের মোহমুক্তির জন্য এতো রক্ত ঝরল তারা কি ভালো আছে?

নিথর দেহটা ফ্লাটের ফ্লোরে পরে ছিল। সারা ফ্লাট রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো, জমাট বাধা গরম রক্ত। প্রাণহীন দেহটা ঠাণ্ডা। গলাটা কাটার সময় ওর খুব কষ্ট হয়েছিলো। হাতপা গুলো নিশ্চয়ই চেপে রেখেছিলো। ছটফট করতে করতে বেচারা মরে গেল। নীলের খুনিরা আজও এভাবেই মানুষ জবাই করে মারছে।সরকার এর দায়ভার নিলেন না। নাস্তিক ছিল কিনা। কেউ খোঁজ রাখে না। সবার জীবন আগের মতোই চলতে থাকে। শুধু নীল নামের মানুষগুলোর দেখা আর পাওয়া যায় না। ওদের কথাও কেউ বলে না।      

Sultanul Arefin Siam

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular