অনলাইনে ঘুরতে ফিরতেই হুট করে আরিফ আজাদের বেস্টসেলার বই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ (১/২) এর একটু অংশবিশেষ চোখে পড়ে গেল। এই বই পড়ে মনে হোলো ইসলাম পন্থীরা এই বই নিয়ে এত এত লাফায়, আসলে এদের মাথায় ঘিলু বলে কিছু আছে মনে করিনা। এই বইয়ের নাম এই কারনেই আমি দিয়েছি প্যারাডক্সিকাল গাধা।
এই বইয়ের এক যায়গায় লেখা আছে- //আচ্ছা, তোর বাবা-মা’র মিলনেই যে তোর জন্ম হয়েছে, সেটা তুই দেখেছিলি? বা,এই মূহুর্তে কোন এভিডেন্স আছে তোর কাছে? হতে পারে তোর মা তোর বাবা ছাড়া অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে তোর জন্মের আগে। হতে পারে, তুই অই ব্যক্তিরই জৈব ক্রিয়ার ফল। তুই এটা দেখিস নি। কিন্তু কোনদিনও কি তোর মা’কে এটা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলি? করিস নি। সেই ছোটবেলা থেকে যাকে বাবা হিসেবে দেখে আসছিস, এখনো তাকে বাবা ডাকছিস। যাকে ভাই হিসেবে জেনে আসছিস, তাকে ভাই। বোনকে বোন। তুই না দেখেই এসবে বিশ্বাস করিস না? কোনদিন জানতে চেয়েছিস তুই এখন যাকে বাবা ডাকছিস, তুই আসলেই তার ঔরসজাত কিনা? জানতে চাস নি। বিশ্বাস করে গেছিস।এখনো করছিস। ভবিষ্যতেও করবি। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসটাও ঠিক এমনই রে। এটাকে প্রশ্ন করা যায়না। সন্দেহ করা যায়না। এটাকে হৃদয়ের গভীরে ধারন করতে হয়। এটার নামই বিশ্বাস।’//
বেশ অবাকই লাগলো! স্রষ্টার বিশ্বাসকে এমন একটা বিশ্বাসের সাথে তুলনা করা হলো- যেটা তার আলোচনাতেই বুঝা যাচ্ছে- সেই বিশ্বাসটা ভুল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা বিদ্যমান। তাহলে, বাবা-মা’র প্রতি বিশ্বাস সংক্রান্ত এই যুক্তিটা স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণে একদমই খেলো যুক্তি হলো না? … যেসব সন্তান ভুল জেনে তার বায়োলজিকালি না- এমন বাবা মাকে বাবা ও মা বলে ডাকে; বাবা মা বলে বিশ্বাস করে; তাদের ক্ষেত্রে কি বলা যাবে যে- এই বিশ্বাসের জোরেই – যাদেরকে বাবামা বলে জানছে- তারা বায়োলজিকালি বাবামা হয়ে গেল? আমি নিজে চিনি- জানি, দেখেছি এমন কিছু ঘটনা! পালক কন্যাকে নিজের সন্তানের মত পালন করেছে- মেয়ে নিজের বাবামা জেনে ও বিশ্বাস করে বড় হয়েছে; অনেক পরে এসে জেনেছে যে- তারা আসল বাবামা না! আমার নিজের এক আত্মীয়ের ঘটনা।
আমার আরেক বন্ধু তার বাবা ও মায়ের ঝগড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছে- তারই বাবা সন্দেহ পোষণ করে যে- আমার বন্ধুটি তার চেনা জানা প্রিয় বাবার ঔরসের সন্তান না! ফলে- একভাবে জানা বোঝা বিশ্বাস- এইসব মোটেও কোনকিছুর সত্যতার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না! আসলেই যদি জানতে চান- কে কার আসল বাবা ও মা- তাহলে ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে। যেমন- প্রবাসে কিছু এডোপ্টেড বাঙালি পরিবারের সাথে আমার পরিচয় আছে- যারা দেশে গিয়ে তাদের অরিজিনাল বাবামা’র খোজ করে। দুই একবার এরকম দাবি করা বাবামা পেয়েওছিলো- কিন্তু ডিএনএ টেস্টে দেখা গেল- তারা আসল বাবামা না।
সুতরাং, কেউ কারো বায়োলজিকাল বাবা-মা কি না- এটা মোটেও -কেউ কিছু একটা বাচ্চাকাল থেকেই বিশ্বাস করে আসছে কি না- তার উপরে নির্ভর করে না। বরং এটা নির্ভর করে- বস্তুত কোন পুরুষের শুক্রাণু কোন নারীর ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে তৈরি হওয়া ভ্রুণ থেকে সেই সন্তানের জন্ম হয়েছে কি না- তার উপরে।অর্থাৎ, বাবামা’তে বিশ্বাস সংক্রান্ত যুক্তির মাধ্যমে বাস্তবে ইশ্বরে বিশ্বাসের অসাড়তাই প্রমান হলো বলে মনে হচ্ছে …। তার মানে কি দাঁড়ালো?
ইশ্বরের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতেই কি এই বই? অথচ- শুনলাম বইটা ধার্মিকদের মধ্যেই নাকি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে! কেমনে কি? বিশাল এক প্যারাডক্সই মনে হচ্ছে। বইটা বেশ ইন্টারেস্টিং-ই হবে বলে মনে হচ্ছে!