এমডি মাহাদি হাসান: আকাশ দেখতে আমি খুবই ভালোবাসি। রাতের মেঘমুক্ত আকাশে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারার মেলা কিংবা কোন এক পড়ন্ত বিকেলে মেঘেদের ছোটাছোটি, সবই ভালো লাগে। ছোটবেলায় আকাশের দিকে তাকিয়ে কত কি ভাবতাম! উদ্ভট উদ্ভট সব চিন্তাভাবনা। এই যেমন, আকাশের তারা খসে পড়া। রাতে একনাগাড়ে আকাশে তাকিয়ে থাকতাম তারাদের খসে পড়া দেখার জন্য আর ভাবতাম, ইশ, যদি একটা খসে পড়া তারা আমি পেয়ে যেতাম! যে তারাটা একটু আগেই খসে পড়লো, সেটা কোথাও না কোথাও পরেছে এবং কেউ সেটা পেয়েছে। খোঁজ পেলে তারাটা আমি কিনে আনতামই যত টাকা লাগুক। আরও ভাবতাম, আকাশের ওপাড়ে কি আছে? সেখানে কি কখনও যাওয়া যাবে না? আমরা যেমন বাড়ির ছাদে উঠি, তেমনি করে আকাশের ওপড়ে উঠতে পারলে না জানি কত ভালো লাগতো!
শুধু ছোটবেলা নয়, এই বড়বেলাতেও আমি আকাশ দেখতে এবং ভাবতে ভালোবাসি। তবে, এখন দৃষ্টিভঙ্গি আর ভাবনার ধরন বদলেছে। এখন আমি জানি, আকাশ আমার বাড়ির ছাদের মত কঠিন কোন বস্তু নয়, তাই আকাশের ছাদে উঠে দৌড়াদৌড়ি করার স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। খসে পড়া তারার প্রতি আর লোভ নেই। কেননা, সেগুলো আসলে প্রকৃত তারা নয়। প্রকৃত তারা পৃথিবীর উপর খসে পড়লে পৃথিবীর অস্তিত্বই থাকবে না। তাছাড়া, খসে পড়া তারাদের আনাগোনা আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভেতর। আর প্রকৃত তারারা থাকে অনেক অনেক অনেক দূরে। এমনকি, আমাদের থেকে সবচেয়ে নিকটে যে তারাটা আছে, প্রক্সিমা সেন্টরী, সেটাও ৪ আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ, সেই তারাটা থেকে আলো আমাদের পৃথিবীতে আসতেও চার বছর লেগে যায়! আপনি আজকে রাতে প্রক্সিমা সেন্টরীকে যেমন দেখছেন, সেটা কিন্তু তারাটার চার বছর আগের অবস্থা। আজ তারাটা বিস্ফোরিত হয়ে গেলেও আমরা তা দেখবো চার বছর পর! এই তো গেলো সবচেয়ে নিকটবর্তীর তারার গল্প, দৃষ্টিসীমার অধিকাংশ তারকাই কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে, মহাবিশ্বের বেশিরভাগ তারকাই এতো দূরে অবস্থিত যে, তা আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি বেশি তথ্য পেতে আমি সাহায্য নিলাম মহা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ, বিজ্ঞানীদের প্রধান তথ্যভান্ডার, সকল জ্ঞানের আঁধার, মহাগ্রন্থ আল কোরানের। কিন্তু কোরান ঘেটে আমি খুবই হতাশ হলাম। মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোরান লেখকের কোন ধারনা আছে বলে মনে হলো না। ১৪০০ বছর আগের একজন আরব বেদুঈনের মহাবিশ্ব সম্পর্কে যতটুকু জানার কথা, ততটুকুই কোরানের দৌড়। ছোটবেলায় “আকাশ” নিয়ে আমি যা যা ভাবতাম, তার অনেক কিছুই কোরানের সাথে মিলে গেলো। বরং, ছোটবেলার সেই উদ্ভট ভাবনাগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে মহাবৈজ্ঞানিক গ্রন্থ কোরান। যেমন, আমি জানতাম, আকাশের তারকা এমনিতেই খসে পড়ে। কোরান পড়ে জানলাম সেগুলো দিয়ে আল্লাহপাক শয়তানকে মিসাইল মারেন! ছোটবেলায় আমি কখনই আকাশ ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করতাম না, কিন্তু কোরান পড়ে জানতে পারলাম, কাফের-মুরতাদরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গেও পড়তে পারে আল্লাপাকের ইচ্ছায়। আকাশ নামক ছাদের উপরে উঠার রাস্তা কোনটা, সেটা আমার একটা চিন্তার বিষয় ছিলো। কিন্তু আল্লাপাক এর সমাধানে জানালেন, আকাশের বেশ কিছু দরজা আছে যেগুলো খুলে দিলেই উপরে উঠা যাবে।
কোরআনে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত এমন মারাত্মক সব তথ্যসমূহ নিয়েই আজকের আলোচনা। যারা নূন্যতম বিজ্ঞান বুঝেন, তারা কোরানের এইসব মহাউন্মাদীয় বিজ্ঞান দেখে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে আমি নিশ্চিত। তবে, যারা বিজ্ঞান একদমই বুঝেন না, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার কথা শুনেই “আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি…” জপা শুরু করে দিয়েছেন, তাদের জন্যে প্রথমে আকাশ, মহাবিশ্ব ইত্যাদি সম্পর্কে একদম সহজ ভাষায় কিছুটা ধারনা দিতে চেষ্টা করবো, অতঃপর কোরানের এইসব বিনোদন নিয়ে হাজির হবো।
আকাশ কি? আকাশে কি কি আছে? মহাবিশ্ব কতটা বিশাল?
পৃথিবীতে অবস্থানকারী একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে, আমাদের মাথার উপর নীলাভ ছাদের মত বস্তুটাই আকাশ। পৃথিবীটা ঘরের মেঝে/ফ্লোর হলে, আকাশটা যেন তার ছাদ। আর এই ছাদস্বরুপ আকাশে সাজানো আছে চন্দ্র, সূর্য, তারা।

প্রকৃতপক্ষে, আমরা এই যে নীল আকাশটা দেখি, সেটা আসলে একটা দৃষ্টিভ্রম। এটা পৃথিবীর উপরে শক্ত কঠিন কোন ছাদ নয়। শুধুই আলোর খেলা। সূর্যের সাদা আলো আসলে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের আলোর মিশ্রন। সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রবেশের সময় বায়ুমন্ডলের ধূলিকণার সংস্পর্শে তা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। বেগুনী এবং নীল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম বলে এরা বেশি বিচ্ছুরিত হয়। তবে, আমাদের চোখ বেগুনী রঙের প্রতি খুব একটা সংবেদনশীল নয় বলে আমাদের কাছে নীল রঙটাই প্রকট হয়ে ধরা দেয়। একারনেই আমরা আকাশ নীল দেখি। রাতে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতির কারনে নীল আকাশ দেখি না। তখন আমাদের দৃষ্টি বায়ুমন্ডল ভেদ করে বহুদূর চলে যায়… তারাদের দেশ পর্যন্ত। চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই বলে সেখানে দিন কিংবা রাত, সবসময়ই “আকাশ” কালো দেখায়। সুতরাং, আমাদের মাথার উপর আকাশ নামক কোন কঠিন নীল রঙের ছাদ নেই। নিচের চিত্রটি দেখুন। পৃথিবীর উপরিভাগে বায়ুমন্ডলের এই সরু নীলাভ লেয়ারটাই আমাদের কথিত “বিশাল নীল আকাশ”।

এক কথায় যদি বলি, মহাবিশ্বটা আসলে “শূন্য”। মহাবিশ্বের প্রায় সবটাই শূন্যস্থান। এই শুন্যস্থানে ভাসমান কিছু জ্যোতিষ্ক রয়েছে। শুন্যস্থানের তুলনায় এই জ্যোতিষ্কসমূহের মিলিত পরিমাণ খুবই নগন্য। একটা জ্যোতিষ্ক থেকে আরেকটা জ্যোতিষ্ক খুব খুব দূরে অবস্থিত যা সাধারন মানুষের কল্পনারও বাইরে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী জ্যোতিষ্কটি হচ্ছে চাঁদ যার গড় দূরত্ব ৩৮৪৪০০ কিলোমিটার। নিচে কয়েকটি চিত্রের মাধ্যমে একটি স্কেল অনুসরন করে আমরা কিছু জ্যোতিষ্কের দূরত্ব দেখাবো। প্রথমেই পৃথিবী আর চাঁদের দূরত্ব দেখে নিই।

এর তুলনায় সূর্যের অবস্থান বহু দূরে। তা প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব।

সূর্যের পর আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্রটি হচ্ছে প্রক্সিমা সেন্টরী যার দূরত্ব প্রায় ৪০,৫১৯,৫৫৩,২০০,০০০ কিলোমিটার (৪০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার)। এটা এতই বিশাল দূরত্ব যে, উপরের স্কেল অনুসরন করে আমরা কোন চিত্রে সৌরজগৎ থেকে প্রক্সিমা সেন্টরীর দূরত্ব দেখাতে পারবো না। যদি দেখাতে চাই, তাহলে সেটাকে দেখাতে হবে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে। ২০ ইঞ্চি কম্পিউটার স্ক্রিনে ৫৪ কিলোমিটার প্রশস্ত ডায়াগ্রাম! সুবহানাল্লাহ!
আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ প্রায় ২৮০০০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের নক্ষত্রদের দেখতে পারি। আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে আরও বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে যারা সবাই আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ে’র অংশ। নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন। এটি আমাদের পাশ্বর্বতী এন্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি। আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ে অনেকটা এরকমই দেখতে। আমরা খালি চোখে যত নক্ষত্র দেখতে পাই, নিচের চিত্রে তাদের অবস্থান হবে একটা ছোট বিন্দুর মত, ২ পিক্সেলের বেশি হবে না কখনই। এবার চিন্তা করুন একেকটি গ্যালাক্সি কত বিশাল!

উপরের চিত্রে একটামাত্র গ্যালাক্সি দেখা যাচ্ছে। নিচের চিত্রটি দেখুন, অনেকগুলো গ্যালাক্সি সম্বলিত একটা গ্যালাক্সিক ক্লাস্টার।

এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি নিয়ে আমাদের এই ইউনিভার্স গঠিত।
কোরান লেখকের জ্ঞানের দৈন্যদশা
এই যে আমাদের এই বিশাল মহাবিশ্ব, এর কতটুকু আছে কোরানে? পৃথিবীর একজন মূর্খ ব্যাক্তির দৃষ্টিতে যতটুকু দেখা সম্ভব, যা চিন্তা করা সম্ভব, কোরানে কেবল ততটুকুই আছে। কোরানে এই মহাবিশ্ব নিয়ে অনেক ঝাড়িঝুড়ি দেয়া হয়েছে। আল্লাহ এই করেছেন, ওই করেছে। এইটা আল্লাহর কথা ছাড়া নড়ে না, ঔটা আল্লাহকে সিজদা করে… ব্লা ব্লা… তবে, কোরানের সব ঝাড়িঝুড়ি কেবলমাত্র ৩ টা জিনিসের মধ্যেই সীমাবন্ধ।
১। চন্দ্র
২। সূর্য
৩। তারা
এর বাইরে একটা লাইনও নেই কোরানে। কোরান লেখকের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞানের এই দৈন্যদশা কেন?
এমনকি, পুরো কোরান ঘেটে আপনি গ্রহ সম্পর্কিত কোন কথা পাবেন না। অথচ, মহাবিশ্বে কত বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ আছে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যেই পৃথিবী থেকে বহুগুন বৃহৎ গ্রহ রয়েছে। নিচের চিত্রটি দেখলে কিছুটা ধারনা পাবেন সেইসব গ্রহগুলোর বিশালত্ব নিয়ে। চিত্রটি গ্রহগুলোর সাইজ এর স্কেল অনুযায়ী অঙ্কিত।

কোরানে কেন নেই গ্রহ সম্পর্কিত কোন তথ্য? একটু চিন্তা করলেই কারনটা উদঘাটন করা সম্ভব। আকাশে তাকিয়ে আপনি কোন গ্রহের অস্তিত্ব বুঝতে পারবেন না। আমরা রাতের বেলা খালি চোখে কয়েকটি গ্রহ দেখতে পাই ঠিকই, তবে সেগুলোকে তারার মতই লাগে দেখতে। কোনটা গ্রহ, আর কোনটা নক্ষত্র (তারকা) সেটা আপনি আলাদা করতে পারবেন না। আরব বেদুইনরাও তাই গ্রহের অস্তিত্ব টের পায় নি। আকাশে জ্বলতে থাকা সবগুলো প্রদীপকেই তারকা(নক্ষত্র) ভাবতো। কোরান লেখকও এর বাইরে যেতে পারেন নি। নিচের চিত্রটি দেখুন। মাঝখানে ত্রিভুজ এর মত আকৃতিতে তিনটা “তারকা” আছে, তাই তো? এই তিনটাই কিন্তু তারকা নয়। এদের মধ্যে দুইটা হচ্ছে গ্রহ, বাকি একটা তারকা/নক্ষত্র। খালি চোখে দেখে কি এদের আলাদা করা সম্ভব??

এবার নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না যে, কোরানে কেন গ্রহের কথা উল্লেখ নেই?
এছাড়াও, আপনি পুরো কোরআন ঘেটে কোথাও পাবেন না পৃথিবী গোলাকার। পাবেন না পৃথিবীর ঘূর্ণনের কথা। কেননা, এসব তথ্য কোন মূর্খ আরব রাখালের জানার কথা ছিলো না।
আরব বেদুইনদের চোখে “আকাশ”
তৎকালীন আরব বেদুইনরা আকাশ সম্পর্কে নানা রকম উদ্ভট ধারনা পোষন করতেন। তারা ভাবতেন আকাশ কোন কঠিন বস্তু যা আমাদের মাথার উপর ছাদের মত স্থাপন করা আছে। পৃথিবীটা (মোল্লাদের ভাষায় “জমিন”) কোন ঘরের মেঝে/ফ্লোর হলে তার ছাদ হলো আকাশ। এইসব প্রচলিত ধারনার সাথে অতিরিক্ত কিছু চাপাবাজি যুক্ত করে নবী মুহাম্মদ আকাশ নিয়ে দারুন কিছু হাস্যরসের যোগান দিলেন। চলুন আমরা কিছু মজাদার আয়াত সম্পর্কে জেনে নিই।
আকাশ আমাদের ছাদস্বরুপ।
Quran 21:32
আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতার লোকেরা বিশ্বাস করতেন যে, আকাশের সংখ্যা সাতটি, জমিনের সংখ্যা সাতটি। এগুলো একটার পর আরেকটা দূরত্ব বজায় রেখে স্তরে স্তরে সাজানো। পরবর্তীতে এই সাত আকাশের ধারনা ইহুদিধর্ম, খ্রিস্টধর্মেও প্রবেশ করে। সর্বশেষে আমাদের দিলের নবী কোরানে সেটা কপি পেস্ট মারেন।
Quran 65:12
আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত।
এবং হ্যাঁ, সেই স্তরে স্তরে সাজানো আকাশগুলোর কোনটাতেই কিন্তু ফাটল নাই। ভবিষ্যতেও ফাটল ধরবে না ইনশাল্লাহ, খুব ভালো মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে আকাশগুলো বানাতে।
Quran 67:3
তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?
আকাশে ফাটল নাই বুঝলাম। তবে কোন ছিদ্র কি আছে? ফুটো থাকলে উঁকি মেরে দেখতে পারতাম ওপাড়ে কি আছে।
Quran 50:6
তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।
আফসোস। আল্লাপাক আকাশে একটা ছিদ্রও রাখেন নাই। ছিদ্র নাই, ফাটল নাই, এমন নিরেট আকাশের ওপাড়ে যাওয়ার স্বপ্ন কি কোন দিনই পূরন হবে না? কি করে যাবো আকাশের ওপাড়ে? সিড়ি টিড়ি আছে তো?
Quran 6:35
আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন…
জানা গেলো যে, আকাশে ওঠার সিড়ি আছে। তবে সেটা কষ্ট করে খুঁজে নিতে হবে। আমি না হয় সিড়ি খুঁজে নিয়ে সেটা বেয়ে আকাশ পর্যন্ত পৌছলাম। এরপর? নিশ্ছিদ্র আকাশের ওপাড়ে কি করে যাবো? দরজা আছে তো?
Quran 15:14
যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণ ও করতে থাকে।
Quran 54:11
তখন আমি আকাশের দরজাগুলো খুলে দিয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষিয়েছিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ। আকাশে ওঠার দরজাও আছে। সেই দরজা খুলে আল্লাহ সেখান দিয়ে বৃষ্টির পানি পৃথিবীতে ঢালেন।
আচ্ছা, আকাশের কি কোন পিলার/খুটি/স্তম্ভ আছে?
Quran 13:2
আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত
সুবহানাল্লাহ! আকাশটা উপরে ভেসে আছে কোন পিলার ছাড়াই! কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? পিলার ছাড়া ছাদ উপরে ভেসে থাকবে কি করে? আকাশ তো মাটিতে পতিত হওয়ার কথা!
Quran 22:65
… তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।
আল্লাহ কত মেহেরবান! আকাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন যেন সেটা বান্দার মাথার উপর না পরে।
তবে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার হাত থেকে মুসলিম উম্মাহ নিরাপদ হলেও কাফের-মুরতাদরা নিরাপদ নয়। তাদের মাথায় আল্লাহপাক আকাশের খন্ড ফেলবেন যেকোন দিন, যখন তার ইচ্ছে হবে।
Quran 34:9
তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিলক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের উপর পতিত করব।…
অতএব, কাফের মুরতাদরা সব সাবধান! কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। আচ্ছা, কিয়ামতের সময় আকাশের অবস্থা কি হবে? আকাশ কি তখনও এমন নিশ্ছিদ্র, ফাটলহীন, পিলার ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকবে?
Quran 77:9
যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে,
Quran 69:16
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।
আহারে, আকাশ নাকি ফুটা হয়ে যাবে… গুড়াগুড়া হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে… আর কি কি হবে?
Quran 21:104
সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব…
কাগজ যেভাবে গুটানো হয়, সেভাবে করে আল্লাপাক কঠিন, নিরেট, সমতল আকাশটাকে গুটিয়ে নিবেন! ইয়া মাবুদ, সেই কঠিন দিনে আমাদের দিকে একটু সুনজর দিও। এই গুনাহগার আক্কাস আলীকে তোমার বন্দু, দিলের নবী মোস্তফার পাশে স্থান দিও।
আকাশের তারা দিয়ে শয়তানকে মিসাইল মারা
আমরা প্রায়ই রাতের আকাশে তারা খসে পড়তে দেখি। ব্যাপারটা আসলে কি? সত্যিই কি আকাশের তারা খসে পড়ে? উত্তর হচ্ছে, না, আকাশের তারা খসে পড়ে না। মহাশুন্যে অসংখ্য উল্কা সর্বদা ঘুরে বেড়ায়। এরা যখন পৃথিবীর আকর্ষনে প্রচন্ড গতিতে বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে আসে, তখন ঘর্ষনজনিত কারনে জ্বলে ওঠে। আর এ দৃশ্যই রাতের বেলা আমাদের চোখে ধরা দেয় “তারা খসা” হিসেবে। দেখলে সত্যিই মনে হবে কোন একটা তারা বুঝি খসে পড়েছে।

অপরপক্ষে, আকাশের তারাগুলো রয়েছে লক্ষ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে। আপনারা প্রাথমিক আলোচনা থেকে জেনেছেন যে, সবচেয়ে নিকটবর্তী তারাটিও ৪০,৫১৯,৫৫৩,২০০,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর, উল্কাপাতের এই ঘটনা ঘটে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েকশত কিলোমিটার উপরে। বিস্তারিত নিজে থেকে জেনে নিতে পারেন গুগল করে যার সার্চ টার্ম হতে পারে “star vs shooting star”
যাহোক, আমাদের দিলের নবী মোস্তফা আকাশের তারা আর উল্কাপাতের পার্থক্য ধরতে পারেন নি। কেননা, পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখে অত কিছু বুঝা সম্ভবও নয়। এজন্যেই তিনি কোরানে উল্লেখ করলেন যে, আকাশের তারা দিয়েই নাকি আল্লাপাক শয়তানকে মিসাইল মারেন!
Quran 67:5
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
নক্ষত্রের মত এতো বড় অগ্নিকুন্ড একটা পুচকে শয়তানের উপর ছুঁড়ে মারলে তার কি অবস্থা হবে ভাবতে পারেন?? 😀
সূর্যের উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থান
সূর্যের উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়ার কি নির্দিষ্ট কোন স্থান রয়েছে?
হ্যাঁ রয়েছে! চলুন, কোরানে এ সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখে নিই।
Quran 18:86
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।
Quran 18:90
অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্নরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।
আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন, স্পষ্টকরেই বলা হয়েছে, সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। এক্ষেত্রে, অনেকেই এই বলে ত্যানাবাজি করেন যে, এখানে উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলা হয় নি, যুলকারনাইনের কাছে ওরকম মনে হয়েছে। না ভাই, আয়াতগুলো আরও দুইবার করে চারবার পড়ুন।
“অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন;” “অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন,” এই দুটো উক্তি তো সরাসরি কোরান লেখকের। কোরান লেখক এখানে নিজের ভাষাতেই সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থানের কথা বললেন। তাই নয় কি? তাছাড়া, যুলকারনাইন সূর্যের অস্তাচলে পৌছে সেখানে একটা সম্প্রদায়কে দেখেছিলেন। আবার, সূর্যের উদয়াচলে পৌছে আরেক সম্প্রদায়কে দেখেছিলেন যাদের মাথার ঠিক উপর দিয়েই সূর্যটা ওঠে, সূর্যতাপে তাদের চান্দি গরম হয়ে যায় কেননা আল্লাপাক সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল সৃষ্টি করেন নি। এতএব, সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থান একেকটি ফিজিক্যাল লোকেশনকেই নির্দেশ করে এবং এটা কোন রুপক কথাবার্তা নয়।
তৎকালীন আরব বেদুইনদের এরকমই ধারনা ছিলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান নিয়ে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে কোরানে।
অজ্ঞানতার নিদর্শন এখানেই শেষ নয়। আমাদের মহাজ্ঞানী হুজুরে পাক ভাবতেন, সূর্য কোন উষ্ণ ঝরণার পানিতে অস্ত যায়। অতঃপর রাতের বেলা সে আল্লাপাকের আরশের নিচে গিয়ে সিজদায় পড়ে থাকে এবং প্রার্থনা করতে থাকে পরের দিন সকালে উদিত হওয়ার জন্যে। আল্লাপাক অনুমতি দিলেই সূর্যটা পরের দিন সকালে উদিত হয়। চলুন এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো দেখে নিই।
Abu Dawud, Book 31, Hadith 3991
Narrated Abu Dharr:
I was sitting behind the Messenger of Allah (ﷺ) who was riding a donkey while the sun was setting. He asked: Do you know where this sets ? I replied: Allah and his Apostle know best. He said: It sets in a spring of warm water (Hamiyah).
Bukhari, Vol. 4, Book 54, Hadith 421 | বাংলা ভার্শন
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাবার সময় আবূ যার (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সাজ্দাহয় পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার উদিত হবার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়— এটাই মর্ম হল মহান আল্লাহর বাণীরঃ ‘‘আর সূর্য নিজ গন্তব্যে (অথবা) কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।’’ (ইয়াসীন ৩৮) (৪৮০২, ৪৮০৩, ৭৪২৪, ৭৪৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৬৯)
মুহাম্মদের সময়কালে এটা জানার কথা না যে, সূর্য ডুবে কোথাও যায় না। সূর্যের ঘোরার কারনে নয়, বরং পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনের জন্যেই দিনরাত্রি সংঘঠিত হয়। বাংলাদেশে যখন রাত নামে, তখন সূর্য গিয়ে আরশের চিপায় সিজদায় পড়ে থাকে না পরের দিন উদিত হওয়ার অনুমতির জন্যে, বরং সেই সময়টাতে সূর্য আলোকিত করে ইহুদি নাসারাদের দেশ ইউরোপ এমেরিকাকে। সূর্য ২৪ ঘন্টাই দৃশ্যমান পৃথিবীর যেকোন অর্ধেকটা জুড়ে। তাই সেটা কখনই আল্লাপাককে সিজদার সময় পায় না।
হাদিসটির এই অংশটি খুব হাসির উদ্রেক করে,
“আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়”
কিয়ামতের আগে সূর্যকে বলা হবে যেখান দিয়ে এসেছো, সেখান দিয়েই ফিরে যাও। তখন সে পূর্ব দিকের বদলে পশ্চিম দিক দিয়েই উদিত হবে। মুহাম্মদ যে ভাবতেন, সূর্যের দৌড়াদৌড়ির কারনেই দিনরাত্রি হয়, এর থেকে আর বড় প্রমাণ কি দরকার আছে? যাহোক, তারপরও এরকম ক্রিয়েটিভ চাপাবাজির জন্যে নবিজীকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না।
এর থেকেও বড় মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, যখনই কোন মডারেট ত্যানাবাজ মুমিনকে এই হাদিসখানা শোনাবেন, সে মুখখানা মলিন করে নিচু স্বরে বলবে, “এটা রুপক”। 😀
চাঁদ ও সূর্যের দূরত্ব, গতিপথ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব
বিজ্ঞান না জানা একজন সাধারন মানুষের পক্ষে মনে হতেই পারে যে, চাঁদ আর সূর্য একই দূরত্বে আছে, এদের গতিপথ একই কিংবা কাছাকাছি। এরা যেকোন সময় সংঘর্ষও বাধিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ১৪০০ বছর পূর্বে পৃথিবীতে অবস্থানকারী একজন আরব বেদুঈনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এমনটা মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কোরানে এর প্রতিফলনও দেখতে পাই আমরা।
Quran 36:40
সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।
আয়াতটি লক্ষ্য করুন। সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের! এর মানে কি ভাই? চন্দ্র আর সূর্যের কক্ষপথ কি নিকটবর্তী যে একটা আরেকটাকে ধরে ফেলার সম্ভাবনা আছে? নাকি এদের কক্ষপথ কোথাও পরস্পরকে ওভারলেপ করেছে? এরা কি একই দূরত্বে অবস্থান করে? নিচের চিত্রটি খেয়াল করুন বন্ধুরা।

চন্দ্র আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে খুব নিকটকেই। অপরপক্ষে আমাদের এই পৃথিবী-চন্দ্র সিস্টেমটি ঘুরছে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত সূর্যকে কেন্দ্র করে। ডায়াগ্রামে দেখুন, সূর্য চন্দ্রের নাগাল পেতে যাবে কোন দুঃখে? নূন্যতম বিজ্ঞান জানা কোন লোকের পক্ষে এমন আহাম্মকি কথাবার্তা বলা সম্ভব নয়। এই কথা সেই মূর্খ ব্যাক্তিই বলবে, যে মনে করে, সূর্য আর চন্দ্রকে তো প্রতিদিন একই পথে যাতায়াত করতে দেখি, তবুও একটা আরেকটাকে ধরতে পারে না।
হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, একবার সূর্যগ্রহনের সময় ভয় পেয়ে নবী মুহাম্মদ ভোঁ দৌড় লাগায় মসজিদের দিকে এবং নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুক্ষন পর সব ঠিকঠাক হতে দেখেই তার ধারনা হয়ে থাকতে পারে যে, সূর্য চন্দ্রের নাগাল পেতে চায় কিন্তু পারে না। চলুন হাদিসটা দেখে নিই।
Bukhari, Vol. 2, Book 18, Hadith 167 । বাংলা ভার্শন
আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত অবস্থায় উঠলেন এবং ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবার ভয় করছিলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর পূর্বে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকূ‘ ও সাজদাহ্ সহকারে সালাত আদায় করলেন। আর তিনি বললেনঃ এগুলো হল নিদর্শন যা আল্লাহ্ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর যিকর, দু‘আ এবং ইস্তিগ্ফারের দিকে ধাবিত হবে। (মুসলিম ১০/৫, হাঃ ৯১২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০০০)
যাহোক, আমরা যদি উপরোক্ত 36:40 আয়াতটির “রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের” এই অংশটির দিকে নজর দিই, তাহলে বলতে হয় এটাও একটা ভুল। মুহাম্মদের আরবে রাত্রি ঠিকই দিনের অগ্রে চলে না, তবে পৃথিবীর উত্তরে যেতে থাকলে, উত্তর মেরুর কাছাকাছি বহু স্থানে রাত্রি দিনের অগ্রে চলে। রাত্রি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং দিন সংকুচিত হতে থাকে। একটা সময় ২৪ ঘন্টাই রাত্রি থাকে এবং দিন উধাও হয়ে যায়। যারা কানাডা, গ্রীণল্যান্ড কিংবা নরওয়ের মত দেশে থাকে, তাদের কাছ থেকে জেনে নিয়েন। কিংবা গুগলে “polar night” লিখে সার্চ দিয়ে বিস্তারিত জেনে নিয়েন। সুতরাং, রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের, এটা ভূগোল না জানা এক মূর্খের প্রলাপ ব্যাতিত আর কিছুই নয়।
চাঁদের নিজস্ব আলো
দুর্ভাগ্যবশত, কোরান লেখকের এটা জানা ছিলো না যে, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। সে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে মাত্র। দেখে নিই কোরানে এ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
Quran 71:16
এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে [নূর] এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।
উল্লেখ্য, এই আয়াত নিয়ে মুমিনদের ত্যানাবাজির কোন শেষ নেই। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই আয়াতে সূর্যের আলো বুঝাতে আরবি শব্দ “সিরাজ” এবং চাঁদের আলোর জন্যে “নূর” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তাই “নূর” দিয়ে “প্রতিফলিত আলো” বুঝানো হয়েছে। এমনকি, এই আয়াতের অনুবাদ করতে গিয়ে Sahih International ব্রাকেটের ভেতর [reflected] কথাও জুড়ে দিয়েছে! তবে, Muslim Khan, Pickthall, Yusuf Ali, Shakir, Dr. Ghali সহ অন্যান্যরা এই চাটুকারিতা করেন নি।
প্রতিফলন/reflection এর জন্য একটি সুস্পষ্ট আরবি শব্দ রয়েছে, انعكاس (in`ikaas) ।
কিন্তু কোরানে চাঁদের আলো বুঝাতে কোথাও এই শব্দখানা ব্যবহার করা হয়নি। হয় “নূর” কিংবা “মুনীর” ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরও, শব্দটা নূর হোক কিংবা মুনীর, মুমিনরা সেটার অনুবাদ করবে প্রতিফলিত আলো।
এইসব চাটুকার মুমিনদের মুখ চুপসে যায় নিচের আয়াতখানা তুলে ধরলে। দেখুন ভালো করে।
Quran 24:35
আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি [নূর], তাঁর জ্যোতির [নূর] উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচপাত্রে স্থাপিত, কাঁচপাত্রটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। তাতে পুতঃপবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল প্রজ্বলিত হয়, যা পূর্বমুখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও তার তৈল যেন আলোকিত হওয়ার নিকটবর্তী। জ্যোতির [নূর] উপর জ্যোতি [নূর]। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির [নূর] দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।
এই আয়াতে আল্লাহর নিজের জ্যোতি বা নিজের আলো বুঝাতে “নূর” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু, এই আয়াতের অনুবাদে কোন মুমিন “নূর” এর অনুবাদ “প্রতিফলিত আলো” করে না। আমাদের Sahih International ও ব্রাকেটের ভেতর reflected শব্দটা জুড়ে দেয় নি। দিবেই বা কোন সাহসে, আল্লাপাকের আলোকে প্রতিফলিত আলো বললে তো জাহান্নাম অবধারিত! এটাই হচ্ছে নিজেদের সুবিধামত অনুবাদ বিকৃতির মাধ্যমে কোরানকে বিজ্ঞানময় করে তোলার ব্যার্থ চেষ্টা।
চাঁদের আলো সম্পর্কিত আমরা আরও একটা আয়াত দেখে নিই।
Quran 75:8
চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।
কেয়ামত নিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর এক পর্যায়ে আল্লাপাক এই আয়াতে এসে বললেন যে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে। জ্যোতি না থাকলে সেটা জ্যোতিহীন হয় কি করে? কোরান লেখক যদি সত্যিই জানতেন যে, চন্দ্রের নিজস্ব আলো নেই, তাহলে এমন কথা বলতেন না।
তাছাড়া, কোরান লেখক যদি একটু খোলাসা করে বলে দিতেন, “তোমরা কি লক্ষ্য করো না, আমি কিভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করাই? তারপরও কি তোমরা ঈমান আনবে না?”, তাহলেই তো মুমিনদের অত কষ্ট করে আয়াতের অর্থ টুইস্ট করে তা বিজ্ঞানময় করতে হতো না।
যাহোক, সবশেষে একটা অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে রাখি। সেটা হচ্ছে, মুহাম্মদের জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে সর্বপ্রথম এনাক্সাগোরাস বলেছিলেন, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, সে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে মাত্র।
আল্লাপাকের সুপারিশকৃত, ধ্বজভঙ্গ হিজরী ক্যালেন্ডার
২০৫০ সালের ক্রিসমাস উৎসব কবে হবে? খ্রিস্টানরা সেটা ঠিকই বলে দিতে পারবে। কিন্তু মুসলিমরা আগামী বছরের ঈদুল ফিতরের তারিখটাও বলতে পারবে না। কেন এমনটা হয় বলতে পারবেন?
কারনটা হচ্ছে, ক্রিসমাস উৎসব হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যা একটি সৌর পঞ্জিকা বা Solar Calendar । অপরপক্ষে, মুসলিমদের উৎসব পালিত হয় হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যা একটি পর্যবেক্ষন নির্ভর চন্দ্র পঞ্জিকা বা Observational Lunar Calendar । সোলার ক্যালেন্ডারের সবকিছু পূর্বেই বলা দেয়া সম্ভব হলেও পর্যবেক্ষন নির্ভর লুনার ক্যালেন্ডারে ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয় কেননা, এটা এস্ট্রোনমিক্যাল হিসেব অনুসরন করে পরিচালিত হয় না, বরং স্বচক্ষে চাঁদ দেখা না দেখার উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। নতুন চাঁদ দেখা না গেলে লুনার ক্যালেন্ডারের নতুন মাস শুরু হতে পারে না। বৈরি আবহাওয়ার কারনে চাঁদ দেখা না গেলে নতুন মাস শুরু হতে বিলম্ব হয়ে যায়। এজন্যে অঞ্চলভেদে নতুন চন্দ্রমাস শুরু হতে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। চন্দ্রমাস ২৯ দিনে হবে নাকি ৩০ দিনে হবে সেটা আগে থেকেও বলে দেয়া সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটিকে এজন্যেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে লালন পালন করছি আমরা।
আলোচনার শুরুতেই দেখে নিই কেন মুসলিমরা চন্দ্র পঞ্জিকা / লুনার ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। কি বলা আছে কোরানে।
Quran 10:5
তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব।…
Quran 2:189
তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম…
দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাপাক মুসলিমদের হাত পা বেধে দিয়েছেন লুনার ক্যালেন্ডার ব্যবহার করার জন্যে। এবং এটিকে মানুষের জন্যে দিন তারিখ হিসাব রাখার মাধ্যম করেছেন।
মুসলিমরা তাদের উৎসব পালনের হিসেব রাখা ব্যাতিত এই লুনার ক্যালেন্ডার আজ কেউ অনুসরন করে না। সারা বিশ্ব চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার তথা সোলার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। কিন্তু কেন বিশ্বের সব মানুষ আল্লাপাকের নির্ধারন করা চন্দ্র পঞ্জিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিলো? কারনটা কি? চলুন একটু জেনে নিই।
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে, এর উপর ভিত্তি করে সোলার ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। অপরপক্ষে, লুনার ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে চাঁদ কর্তৃক পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তনের উপর ভিত্তি করে।
সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তনের উপর ঋতু পরিবর্তন নির্ভর করে। সুতরাং, ঋতু পরিবর্তন সোলার ক্যালেন্ডার এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন হয়। আর, বলাই বাহুল্য যে ঋতু পরিবর্তনের হিসেব রাখা কত গুরুত্বপূর্ন। সময়মত ফসল লাগানো, ফুল ফল এর উৎপাদন, গাছপালা পশুপাখির প্রজনন, আবহাওয়ার, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছুই ঋতু পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, এসব কাজে সোলার ক্যালেন্ডারই ভরসা।
কিন্তু লুনার ক্যালেন্ডার দিয়ে ঋতু পরিবর্তনের হিসেব রাখা যায় না কেন?
চাঁদ একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে প্রায় ২৯.৫ দিনে যাকে বলা হয় এক চন্দ্রমাস। সুতরাং, এক চন্দ্রবছর হয় প্রায় ২৫৪ দিনে। যা এক সৌরবছরের তুলনায় ১১ দিন কম। এভাবে, প্রতি সৌরবছর সময়ে লুনার ক্যালেন্ডারের সাথে সোলার ক্যালেন্ডার পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে ১১ দিন করে। যা তিন সৌরবছরে প্রায় ১ মাস পার্থক্য।
ঋতু পরিবর্তন যেহেতু সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ঘূর্ণন এর উপর নির্ভর করে এবং এটার সাথে লুনার ক্যালেন্ডার কোন সম্পর্কই নেই, তাই লুনার ক্যালেন্ডার দিয়ে আপনি ঋতু পরিবর্তনের হিসেব রাখতে পারবেন না। উদাহরনস্বরুপ, কোন কৃষক যদি ১৪৩১ হিজরি সালের ৬ রমজান কোন একটা ফসলের চারা রোপন করে, তাহলে তিন বছর পর ঋতুর একই সময়ে উক্ত ফসলের চারা রোপন করতে হলে সেটা করতে হবে ১৪৩৪ হিজরি সালের ৯ সাওয়াল। অর্থাৎ, রমজান মাসের পরের মাস সাওয়ালে। কিন্তু, উক্ত কৃষক যদি গ্রেগরিয়ান সোলার ক্যালেন্ডার অনুসরন করে, তাহলে তারিখটা হবে যথাক্রমে ১৫ আগস্ট, ২০১০ এবং ১৫ আগস্ট ২০১৩। অর্থাৎ, সোলার ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রে মাস চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে না। এভাবেই, সোলার ক্যালেন্ডার দিয়ে ঋতু এবং কৃষিকাজের হিসেব করা যায়।
লিপ ইয়ার কি তা সবাই জানেন। প্রতি চতুর্থ বছরে ফ্রেব্রুয়ারীতে অতিরিক্ত ১ দিন যোগ করে সামঞ্জস্য বিধান করি। লিপ ইয়ার হয় ৩৬৬ দিনে। ঠিক একই সিস্টেম ফলো করে প্রতি ৩ বছরে আমরা যদি হিজরি ক্যালেন্ডারে ১ মাস করে যোগ করতে পারতাম, তাহলে উপরোক্ত সমস্যার সমাধান করে তা সোলার ক্যালেন্ডারের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা যেতো এবং সেই হিজরি বছরটি হতো ১৩ মাসের বছর। আর, এরুপ সামঞ্জস্য বিধানকারী ক্যালেন্ডারকে বলে Lunisolar Calendar । হিব্রু, জৈন, ট্রাডিশনাল চাইনিজ ক্যালেন্ডার একেকটি লুনিসোলার ক্যালেন্ডার। কিন্তু হিজরি ক্যালেন্ডারকে লুনিসোলার করা যাচ্ছে না আল্লাপাকের নিষেধাজ্ঞার কারনে। নিম্নোক্ত আয়াতটিই বাধা। আল্লাপাকের গননায় মাস ১২ টি। ১৩ মাসে বছর গননা করলে আল্লাপাকের আরশ কেঁপে উঠতে পারে।
Quran 9:36
নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান;…
যাহোক, এসকল কারনেই আল্লাপাকের সুপারিশকৃত ধ্বজভঙ্গ হিজরী ক্যালেন্ডারকে মানুষ আর ব্যবহার করছে না।