‘আল্লাহর নবী আল-তায়েফ থেকে রওনা হয়ে যখন (মদিনায়) প্রত্যাবর্তন করেন, বুজায়ের বিন যুহায়ের বিন আবু সালমা তার ভাই কা’ব কে চিঠি লিখে জানায় যে আল্লাহর নবী মক্কার কয়েকজন মানুষ-কে হত্যা করেছেন যারা তাকে বিদ্রূপ ও অপমান করেছিল; আর যে কুরাইশ কবিরা অবশিষ্ট ছিল – ইবনে আল-যিবা’রা ও হুবাইয়েরা বিন আবু ওয়াহাব – তারা চতুর্দিকে পালিয়ে গিয়েছে।
“যদি তোমার জীবনের মায়া থাকে তবে আল্লাহর নবীর কাছে তাড়াতাড়ি চলে এসো; কারণ যে কেউ অনুতপ্ত হয়ে তাঁর কাছে আসে, তিনি তাকে হত্যা করেন না। যদি তুমি তা না করো, তবে তুমি কোনও নিরাপদ স্থানে চলে যাও।”
এই গুরুগম্ভীর পত্রটি পাওয়ার পর কা’ব তার জীবনের আশংকায় ভীষণ যন্ত্রণা কাতর ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তার আশেপাশের শত্রুরা তার সম্পর্কে আশঙ্কাজনক খবর ছড়িয়ে বেড়ায় এই বলে যে, তাকে হত্যা করায় উত্তম।
কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে সে কবিতা রচনা করে, যেখানে সে আল্লাহর নবীর মহিমা-কীর্তন করে, তার ভীতির বিষয়টি উল্লেখ করে ও তার শত্রুদের অপবাদ জনক খবর-গুলো প্রকাশ করে।
অতঃপর সে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ও আমার জানা তথ্য অনুসারে, সে তার পরিচিত এক জুহাইনা [গোত্রের] লোকের সাথে অবস্থান করে। সে তাকে আল্লাহর নবীর কাছে নিয়ে আসে যখন তিনি সকালের নামাজ আদায় করছিলেন, সে তাঁর সাথে নামাজ পড়ে। লোকটি আল্লাহর নবীর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে তাকে দেখিয়ে দেয় ও তাকে তাঁর কাছে গিয়ে তার জীবন ভিক্ষার আবেদন করতে বলে।
সে উঠে দাঁড়ায়, সেখানে যায় ও আল্লাহর নবীর পাশে এসে বসে তার হাতটি তাঁর হাতের ওপর রাখে, আল্লাহর নবী জানতেন না যে সে কে। সে বলে, “হে নবী, কা’ব বিন যুহাইর অনুতপ্ত হয়ে মুসলিম হিসাবে আপনার কাছ থেকে নিরাপত্তা চাইতে এসেছে। সে যদি আপনার কাছে আসে, তবে কি আপনি তাকে তা মঞ্জুর করবেন?” আল্লাহর নবী যখন বলেন যে তিনি তা করবেন, সে তখন স্বীকার করে যে সেই হলো কা’ব বিন যুহাইর।
আসিম বিন উমর বিন কাতাদা আমাকে বলেছে যে, আনসারদের এক লোক তার উপর লাফিয়ে পড়ে ও এই আল্লাহর শত্রুর কল্লা কেটে ফেলার অনুমতি চায়, কিন্তু নবী তাকে ছেড়ে দিতে বলে; এই কারণে যে, সে তার অতীত-কে ত্যাগ করে অনুতপ্ত অবস্থায় আগমন করেছে। লোকটির এই আচরণের কারণে কাব আনসারদের এই গোত্রের লোকদের উপর রাগান্বিত হয়, আর তাছাড়া কেবল মুহাজিররাই তার সম্পর্কে ভাল কথা বলেছিল। যে মহিমাকীর্তন কাব্য-গাথা সে রচনা করেছিল তা সে আল্লাহর নবীর কাছে আসার পর আবৃতি করে– [অনেক বড় কবিতা]।’
– অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ – লেখক।
ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে আদি উৎসে মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) ওপরে বর্ণিত প্রাণবন্ত বর্ণনায় সে বিষয়-টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, তা হলো:
“কবি কা’ব বিন যুহাইরের ইসলাম গ্রহণের একমাত্র কারণ হলো, ‘মৃত্যু-ভীতি’! তিনি তাঁর জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, মুহাম্মদের মতবাদ ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়!”