সূফীবাদ হচ্ছে ইসলামের সেই শিক্ষার দিক যা পরজগৎ , বৈরাগ্যবাদ এবং ধার্মিকতার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করে. জীবনকে পরিত্যাগ বা বর্জন করে নয়, বরং জগতের অশুভ-অকল্যাণের সঙ্গে সংগ্রাম করে মানুষকে এর উর্ধে উঠতে হবে – ইসলামের এই বাস্তব জীবনবোধ ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক ভাবধারাকে তারা উপেক্ষা করেন। এইজন্য তারা পরাজয়ের ভাবধারা, অসাড় ও নিষ্ক্রিয় মনোভাব ইসলামে প্রবেশ করান এবং জগতের সকল অকল্যাণ ও মন্দের ঊর্ধ্যে উঠে বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার আত্মবিশ্বাসের শক্তি হারান।
সুফিবাদের ইতিহাসে দুটো স্তর – প্রাথমিক স্তর: এটি মুসলিম যুগের কয়েক শতাব্দীকে অন্তর্ভুক্ত করে. এই সময়ে মুসলিম সমাজে এক শ্রেণীর লেখকের আবির্ভাব ঘটে যারা সুখ, সক্রিয় ও সংগ্রামী জীবনের পরিবর্তে আত্মবিনাশের নেতিবাচক ভাবধারার পুষ্টি সাধন করেন। সংগ্রামী জীবনের পরিবর্তে তারা মূলত আল্লাহর প্রেম ও অনুধ্যানের ধর্মীয় ও তাপস জীবন বেঁচে নেন. তারা হচ্ছেন আত্মপরিতৃপ্ত লোক – এই জগতের সকল সুখ ও আনন্দের প্রতি তারা উদাসীন এবং তাদের চাহিদাও ন্যূনতম। তারা প্রধান ঐশী সত্তার উপলব্ধি বিষয় নিয়েই জড়িত থাকেন এবং নিজেদেরকে আহলে-আল-হক্ক (সত্যের অনুসারী) বলে অভিহিত করেন। আল্লাহর প্রেম ও ধ্যানে তারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেন। তাদের মতে , এই জগৎ আসলেই মন্দ, অশুভ ও অকল্যাণে পরিপূর্ণ – এর মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া মানুষের উচিত নয়. মানুষের উচিত একে পরিহার করে পরজগতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা. এই প্রাথমিক স্তরে রয়েছেন প্রখ্যাত তাপস আবু হাসেম, রাবেয়া বসরী, মারুফ কারখী ছাওবান বিন ইব্রাহিম, যুন্নুন মিসরী , বায়েজিদ বোস্তামি, আবু ইয়াজিদ, জুনায়েদ বাগদাদি এবং হিজরী প্রথম তিন শতাব্দীর অন্য তাপসবৃন্দ।
দ্বিতীয় বা পরবর্তী স্তরে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশক্তির প্রভাবে এই ভাবধারা এক ধরণের মরমী দর্শনে বিকাশ লাভ করে যা মূলত বৈশিষ্টে সর্বেশ্বরবাদী। এই সুফী সাধকগণ তাদের শিক্ষার মধ্যে বিভিন্ন বিদেশী এবং অনৈসলামিক উপাদান সংমিশ্রণ করেন। এইসব প্রখ্যাত চিন্তাবিদদের মধ্যে রয়েছেন: মনসুর হাল্লাজ, ইবনে আল আরবি, আল ইশরাকি, রুমি এবং জামী। আল গাজ্জালীর মাধ্যমে সুফিবাদ ধর্মীয় জীবনে তার সুদৃঢ় আসন লাভ করে.
বাংলাদেশে যে ইসলাম প্রথমে প্রবেশ করে তা ছিল সুফী ভাবধারার। এইজন্য বাংলাদেশী মুসলমানদের মধ্যে এক প্রকার উদাসীনতা লক্ষ করা যায়. এই ভাবধারা বিজ্ঞানের ঠিক বিপরীত। এই জন্য বাংলাদেশিদের মধ্যে বিজ্ঞান আজও দৃঢ়ভাবে শিকড় গজাতে পারে নাই.
তাবলীগ জামাতের মূল ভাবধারা সুফী ভাবধারার অফস্যুট।